ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জেলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান চলবে

নিউজ  ডেস্ক :: কক্সবাজারে দুদকের চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ। একই সাথে সাধারণ মানুষের অন্যতম আস্থার এই প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল। অন্যদিকে দুদকের র্শীষ কর্মকর্তারা বলছেন আগের চেয়ে দুদকের সক্ষমতা বেড়েছে এবং স্বাধীনতা এসেছে। তাই দুদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সাথে প্রকৃত দুর্নীতির তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানান কর্মকর্তারা।

গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের ২টি সফল অভিযানে আটক হয়েছেন মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমান। মহেশখালী ভূমি অফিসের বেশ কয়েকজন ভোক্তভুগীর মতে ২৮ অক্টোবর দুদকের হাতে আটক হওয়া আবদুর রহমান প্রতিটি নামজারী মামলা থেকে কমপক্ষে ৬০০০ টাকা বাধ্যতামূলত নিতেন। যদি কোন ফাইলে সামান্য কাগজের সমস্যা থাকে তাহলে সেটাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাকে দিতে হতো।

এছাড়া তদন্ত থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের কাজেও বিপুল টাকা ঘুষ হিসাবে আদায় করতেন তিনি। আর তার দুর্নীতিতে সমান সহযোগিতা করতেন ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি বলে স্থানীয়দের দাবী।

২৮ অক্টোবর অত্যন্ত গোপনে খুবই সতর্কতার সাথে দুদক যে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে সেটা প্রশংসার দাবী রাখে। এভাবে আরো কিছু সরকারি দপ্তরে অভিযান চললে সরকারি কর্মকর্তারা সাবধান হয়ে যেত এবং তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এদিকে ৩০ অক্টোবর আটক হন টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আবদুল আজিজ ও সাবেক সচিব রিয়াজুল ইসলাম। এই অভিযান জনমনে বেশ স্বস্তি এসেছে বলে জানা গেছে কারণ বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচার থেকে শুরু করে মানবপাচার সহ অসংখ্য অভিযোগ আছে। এছাড়া তিনি একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক তালিকা ভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ি।

এছাড়া দুদক কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা,কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিমানবন্দর, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সহ বেশ কিছু প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করেছে সে মামলায় অনেক শীর্ষ কর্মকর্তারা জেল খাটছেন। এছাড়া জেলা কারাগার সহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তাধীন আছে।

এদিকে দুদকের চলমান কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুজন সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেন, আগে দেখতাম দুদক শুধু কিছু নিয়মিত কার্যক্রমে সীমাবন্ধ থাকতো এখন দেখছি তারা বেশ সক্রিয় এতে নাগরিক হিসাবে আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ নাগরিকদের জন্য উচ্চ বেতন ভাতা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করে সেবা করার জন্য। কিন্তু মানুষকে প্রজা আর রাজার ভুমিকায় অবতীর্ণ হন।

এছাড়া রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় দূর্নীতির বিস্তার বেশি হচ্ছে তাই সব দিকে এখন নজর দিয়েছে দুদক আমরা আশা করি কক্সবাজারে আরো একাধিক সফল অভিযান হলে এখানকার মানুষ কিছুটা হলেও নিস্তার পাবে।

আরেক শিক্ষাবিদ প্রফেসর জাফর আহামদ বলেন, দূর্ণীতির বটবৃক্ষ অনেক শক্তিশালী এবং বিস্তৃত তাই একদিনে বা একটি প্রতিষ্টান দিয়ে সেটা বন্ধ করা যাবে বলে আমার মনে হয়না। সেজন্য নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। তবে বর্তমানে কক্সবাজারে দুদকের কয়েকটি অভিযানে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি এসেছে,মানুষ এরকম আরো অভিযান দেখতে চায়। বিশেষ করে ভুমি সংক্রান্ত অফিস গুলোতে বেশি নগদ টাকার লেনদেন হয় বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, সব ক্ষেত্রে দুদকের স্বক্ষমতা বেড়েছে,দুদক বর্তমানে সততা সংঘ,র্দূনীতি প্রতিরোধ কমিটি করে মানুষকে সচেতন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা সাধারণ মানুষ আগে দুদকের কোন কর্মর্কতার সাথে কথা বলতে পারতো না এখন তথ্য প্রযুক্তির কারণে অনেক কিছু সহজ হয়ে গেছে মানুষ অবাধে কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। সে কারনে দুদক মানুষের আস্থায় আসছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এড মোহাম্মদ জাহাঙ্গির বলেন, দীর্ঘ বছর পর দুদক আইন ২০০৭ সংশোধন করা হয়েছে। দুদক এখন নিজেরা এজাহার করতে পারে আর ফাঁদ মামলাতো আগে থেকে আছেই। তবে একটা বিষয় আমি বলতে চাই ২০ জুন ২০১৯ যে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে সেটা আরো ব্যাপক ভাবে প্রচার করলে মানুষ আরো বেশি জানতে পারতো এবং মানুষের উপকার হতো।

এ ব্যপারে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন,আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য আমরা পালন করছি। তবে মানুষ সঠিক তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলে আরো বেশি ভাল হতো।

এ ব্যাপারে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, আগের চেয়ে দুদকের অনেক স্বক্ষমতা বেড়েছে। দুদক স্বাধীনভাবে সব কাজ করতে পারছে। শুধু কক্সবাজার নয় সারা দেশে আমাদের দূর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। সঠিক তথ্য থাকলে প্রয়োজনে কক্সবাজারে অভিযান আরো জোরদার করা হবে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: