ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান চলাচলে ঝুঁকিতে যন্ত্র নেই পাখি তাড়ানোর

আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ::  আকাশপথে বিমান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘বার্ড শ্যুটার’ থাকার নিয়ম আছে। এই শ্যুটার সপ্তাহে সাতদিন বিমানবন্দরের আকাশে নিয়মিত পাখি শিকার বা তাড়িয়ে বিমান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখে। কিন্তু চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বার্ড শ্যুটার বা এর চেয়ে আধুনিক কোনো পদ্ধতি নেই। ফলে পাখির আঘাতের কারণে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে; শীত মৌসুমে পাখি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বড় ঝুঁকির শঙ্কা বাড়ছে।

গত শনিবার চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে পাখির আঘাতে দেশিয় বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিমানে থাকা ৬৩ যাত্রীর সবাই অলৌকিকভাবে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন। এর পর থেকে বিমানবন্দরে বার্ড শ্যুটার না থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারোয়ার ই জামান বলেন, ‘আমাদের কাছে বার্ড শ্যুটার বা বন্দুক কোনোটাই নেই। অনেক আগেই এই পদ্ধতি চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘শীতকালে বিমানবন্দরের আকাশে পাখির চলাচল বেশি থাকে বলে আমরা বাড়তি সতর্কতা নিই। আমাদের কাছে পাখি মারার নিজস্ব প্রযুক্তি নেই বলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সেই সহায়তা দিচ্ছে। সপ্তাহে সাতদিন বিমান বাহিনীর নিজস্ব বার্ড শ্যুটার দিয়ে পাখি মেরে বিমান চলাচল নির্বিঘ্ন করার কাজ করছে।’

সারোয়ার ই জামান বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি না আসা পর্যন্ত বিমান বাহিনীর সহায়তা নিয়ে কাজ চালাব। একইসঙ্গে ‘আলট্রাসাউন্ড বার্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ প্রযুক্তি কেনার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই প্রযুক্তি চালুর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।’

আমাদের কাছে বার্ড শ্যুটার বা বন্দুক কোনোটা নেই। অনেক আগে এই পদ্ধতি চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো অনুমোদন মেলেনি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী ফ্লাইট গড়ে ৮০টি এবং সামরিক বাহিনীর ফ্লাইট ৫০টি। ফলে আকাশকে নিয়মিত নিরাপদ রাখতে বার্ড শ্যুটার অপরিহার্য। কারণ সামান্য পাখির আঘাতে একটি উড়োজাহাজের সব যাত্রীর প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি হয়।

বেসরকারি বিমান সংস্থার সিনিয়র এক পাইলট কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিমান চালানোর সময় আকাশের বিভিন্ন স্তরেই বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির কবলে পড়ি। একেবারে উপরের স্তরের ঈগল বা চিল, মধ্যস্তরে অতিথি পাখির, একেবারে নিচের স্তরের বকসহ অন্য বড় পাখিগুলো। দু একটি পাখি থাকলে খুব বেশি সমস্যা হয় না। এক ঝাঁক পাখি থাকলেই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। আকাশের ১০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে পাখি চলাচল বেশি থাকে বলে আমরা ঝুঁকি এড়াতে বিমানের গতি কমিয়ে দিই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই পাখির উড়াল বিমান চলাচলে ঝুঁকির কারণ। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিমান চলাচল নির্বিঘ্ন করে থাকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিন্তু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সেটি না থাকায় আমরাও উদ্বিগ্ন থাকি; বিশেষ করে শীতকালে।’

বিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দিনের বেলায় এবং শীত মৌসুমে পাখি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বিমান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। দুর্ঘটনা ঘটে প্রধানত বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়। এ সময় পাইলটরা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি।

ইউটিউব ঘেঁটে দেখা গেছে, বিশ্বের বড় ও ব্যস্ততম বিমানবন্দরে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে পাখি না মেরে শুধু তাড়িয়ে দিয়ে বিমান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখা হচ্ছে। এজন্য শুধু একটি লেজার লাইট এবং প্রশিক্ষিত টিম দরকার। এ ছাড়া আরেক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিমানবন্দরের আকাশে বিশেষ শব্দ তৈরির মাধ্যমে পাখি চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হবে; যাতে পাখিগুলো শব্দের কারণে ওই এলাকা এড়িয়ে চলে।

জানতে চাইলে রিজেন্ট এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করা, বছরের কোনো সময়ে কয়টি বার্ড স্ট্রাইক ঘটে। এর পর সমাধানের আধুনিক পদ্ধতি চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনেক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সেগুলোতে বড় বিপর্যয় ঘটেনি। প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

উল্লেখ্য, একটি সংস্থা বিশ্বের ৯১টি দেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এসব বিমানবন্দরে এক লাখ দুর্ঘটনা ঘটেছে বার্ড স্ট্রাইকের কারণে।

পাঠকের মতামত: