ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারের কলেজগুলো রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের মুখে রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
‘রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়ে কলেজ অধ্যক্ষগণ অধিকাংশ বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদেরকেও ফাইন্যাল পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম ফিলআফ করাতে বাধ্য হয়ে পড়েন। এ কারনেই পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হয়। আর দায়ভার পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর।’ কলেজ পরিচালনা কমিটি থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের এমন অবস্থা থেকে কলেজ শিক্ষকরা রেহাই পেতে চান কলেজের অধ্যক্ষ সহ শিক্ষকরা।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে এইচ,এস,সি পরীক্ষা ২০১৯ এর ফলাফল পর্যালেচনা ও মান সন্মত শিক্ষা বিষয়ে এক মত বিনিময় সভায় কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা জেলা প্রশাসকের প্রতি এমনই আকুতি জানান।
এসবের জবাবে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন,সম্প্রতি ঘোষিত এইচ,এস,সি পরীক্ষার কক্সবাজারের কলেজগুলোর ঘোষিত ফলাফলে আমার যেন মনোবেদনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলাফল বিপর্যয়ের সঠিক কারণ নির্ণয় করে আগামীতে কি করে ভাল ফলাফল করা যায় সেই পদ্ধতি বের করাই এমন মতবিনিময় সভার উদ্দেশ্য বলে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে দেখা দিয়েছে। মান সন্মত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, প্রতিষ্টানগুলোর ছাটখাট সমস্যা এড়িয়ে আমাদের সমানে এগুতে হবে।
ঘোষিত ফলাফল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যালোচনার পর গতকালের মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আমিন আল পারভেজ বলেন, শিক্ষার বিনিয়োগের মত উৎকৃষ্ট আর কোন বিনিয়োগ হতে পারেনা। তবে শিক্ষাকে অবশ্যই মানসন্মত করতে হবে। মানসন্মত শিক্ষা এ প্রজন্মকে দিয়ে উচ্চতায় তুলতে পারে গোটা জাতিকে। এমন শিক্ষা জাতি এবং দেশটিকে করতে পারে আলোকিত-বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

সম্প্রতি ঘোষিত এইচ,এস,সি পরীক্ষার ফলাফল সবচেয়ে বেশী বিপর্যয় ঘটেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কলেজগুলোতে। চকরিয়ার বদরখালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আলতাফ হোসাইন ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেন-‘ কলেজের গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে। পাশ-ফেল বিবেচনা না করেই শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলআফ করার কারণেই এমন বাজে ফলাফল আমাদের বরণ করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, কোন শিক্ষকই একজন ছাত্রের খারাপ ফলাফল আশা করে না। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের মুখে ফেল করা ছাত্রকেও ফরম ফিলআফ করতে তাদের বাধ্য করা হয়। এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠা না গেলে পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বদরখালী কলেজটি সম্প্রতি পরিদর্শন করে এসে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বলেন, কলেজের মাঠটির কিয়দংশ জুড়ে পর্যন্ত হালচাষ করা হয়েছে। কলেজটিতে শিক্ষারই কোন আবহ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, একটি কলেজের দৃশ্যমান অবস্থা এরকম কোন ভাবেই কাম্য হতে পারেনা।

চকরিয়ার ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ জানান, ৩২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ইংরেজী বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১৪০ জন পরীক্ষার্থী। কলেজটি নানা সমস্যায় হাবুডুব খাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রামু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক তার কলেজের একটি ভিন্ন রকমের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন-‘আমার কলেজের ক্লাশে শিক্ষার্থীদের আমরা ধরে রাখতে পারছি না। ক্লাশ না করেই শিক্ষার্থীরা পালিযে যায়। এমনকি ওরা পালিয়ে কোচিং করতে যায়। কলেজের বাইরে অনেকেই কোচিং ক্লাশ নিয়ে বসেন কলেজের ক্লাশ চলাকালীন সময়ে।’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ্যের এমন কথায় জেলা প্রশাসক জানতে চান-এজন্য দায়ি কে ?

চকরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আকম গিয়াসুদ্দিন বলেন, সকাল বেলায় কোচিং বন্ধ রাখা দরকার। কেননা সকাল বেলায় কলেজের ক্লাশ চলাকালীন সময়ে যাতে ছাত্ররা ক্লাশ ছেড়ে পালিয়ে না যেতে না পারে। উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, কলেজটি সরকারি করণ করার পর থেকেই কোন কাজই করা যাচ্ছে না। এখন অবস্থা এমনই যে, আমরা সরকারিও নই এবং বেসরকারিও নই।
অনুষ্টানে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম, হ্নীলা মঈনুদ্দিন কলেজ ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ইউনুস বাঙ্গালী সহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজার জেলার ২৫ টি কলেজের মধ্যে অন্তত ১৪ টি কলেজেই অধ্যক্ষ বিহীন অবস্থায় চলছে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কোনভাবে চলছে এসব কলেজগুলো।

প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক ঘোষিত ফলাফলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে চকরিয়ার সিটি কলেজ। কলেজটির ১১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১১ জন পাশ করেছে। পাশের হার মাত্র ৯.৩২। অপরদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজ সর্বোচ্চ শতকরা ৯৪ জন পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। বেসরকারি কলেজের মধ্যে হ্নীলা মঈনুদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ শতকরা ৭৩ জন পরীক্ষার্থী পাশ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

পাঠকের মতামত: