ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামের দুই সিএসডি, ঝুঁকিতে দেড় লাখ টন খাদ্যশস্য

চট্টগ্রাম ব্যুরো ::  খাদ্যশস্য চট্টগ্রামে সরকারি দুই সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপোর (সিএসডি) ১ লাখ ৫৯ হাজার টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় খাদ্য গুদাম হালিশহর সিএসডি ও দেওয়ানহাট সিএসডিতে চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য প্রেরিত সিংহভাগ খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য অধিদফতর সময়মতো ও চাহিদা অনুযায়ী কীটনাশক ওষুধ ও কীট ধ্বংসকারী ওষুধ সরবরাহ না করায় এই ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রামে হালিশহর সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো বা সিএসডির অধীনে ১২৬টি গুদাম এবং দেওয়ানহাট সিএসডির অধীনে রয়েছে ৬৬টি গুদাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিশহর সিএসডিতে বর্তমানে চাল মজুদ রয়েছে ৭১ হাজার মেট্রিক টন, গম মজুদ রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন। দেওয়ানহাট সিএসডিতে চাল মজুদ রয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন, গম মজুদ রয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন। দুই সিএসডিতে ঝুঁকির মধ্যে থাকা খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য ৫৫৭ কোটি টাকার বেশি বলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এসব খাদ্যশস্যে জরুরি ভিত্তিতে কীটনাশক প্রয়োগ করা না হলে তা নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খাদ্য অধিদফতর দুই সিএসডিতে চাহিদা অনুযায়ী কীটনাশক সরবরাহ না করলেও ২৭ অক্টোবর গুদামজাত খাদ্যশস্যের গুণগতমান ও কীট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।

খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগের পরিচালক জুলফিকার রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়- ১৭ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী খাদ্য অধিদফতরের আওতাধীন সরকারি খাদ্যগুদামসমূহে মজুদ করা খাদ্যশস্যের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৭৩৩ মে. টন। এ বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আগামী কয়েক মাস সংরক্ষণ করতে হবে বা সংরক্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। গুদামজাত খাদ্যশস্য সংরক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি।

সংরক্ষণের নীতিমালা ও গুদামের স্বাস্থ্যনীতি প্রতিপালনের পাশাপাশি খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারাগরি বিভাগের সূত্রোস্থিত স্মারকের নির্দেশনা মোতাবেক কীট নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে। গুদামজাত খাদ্যশস্য ওয়ারেন্টি মোতাবেক বিলি বিতরণ করতে হবে।

একই নির্দেশায় কীট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে বলা হয়- খাদ্য গুদামসমূহে খাদ্যশস্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গুদামের স্বাস্থ্যনীতি প্রতিপালন, গুণগতমান ও কীট নিয়ন্ত্রণ, বিলি বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, খাদ্য অধিদফতর নির্দেশনা দিয়েই দায় সারতে যাচ্ছে। খাদ্য অধিদফতর যথাযথভাবে সংরক্ষণ, গুদামের স্বাস্থ্যনীতি প্রতিপালন, গুণগতমান ও কীট নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিলেও চাহিদা অনুযায়ী কীটনাশক ট্যাবলেট ও তরল ওষুধ সরবরাহ করছে না। চলতি বছরের জুলাই থেকে খাদ্যশস্যের জন্য কীটনাশক ধ্বংসকারী ট্যাবলেট ও তরল কীটনাশক চেয়ে অধিদফতরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়।

কিন্তু অধিদফতর সিএসডির চাহিদা অনুযায়ী তরল কীটনাশক ও কীট ধ্বংসকারী প্রয়োজনীয় ট্যাবলেট সরবরাহ করেনি। যে পরিমাণ ওষুধ ও কীটনাশক ধ্বংসকারী ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ১০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের জন্য ১ কেজি কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু খাদ্য অধিদফতর সে অনুপাতে খাদ্যশস্যের প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ দেয়নি। খাদ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইচ্ছা করে ওষুধ সরবরাহ সংক্রান্ত টেন্ডার চারবার বাতিল করেছেন। ফলে খাদ্য অধিদফতর নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ কিনতে পারেনি। খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এ জটিল পরিস্থিতির হয়েছে।

এক কর্মকর্তা জানান, খাদ্যশস্যের পোকা অত্যন্ত সংবেদনশীল। খাদ্যশস্যে ‘ফুল ড্রোজ’ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ‘হাফ ডোজ’ বা নিয়মের কম কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করলে ওই কীট স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বংশ বৃদ্ধি করে বা ধ্বংসাত্মক হয়। ফলে ডোজের কম কীটনাশক প্রয়োগ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মের কম কীটনাশক প্রয়োগের চেয়ে প্রয়োগ না করাই অনেক ক্ষেত্রে উত্তম।

হালিশহর সিএসডির ব্যবস্থাপক থোয়াই মং প্রু মারমা বলেন, সিএসডিতে খাদ্য মজুদের বিপরীতে কীটনাশকের অপ্রতুলতা রয়েছে। অধিদফতর থেকে শিগগিরই কীটনাশক পাঠাচ্ছে বলে জেনেছি। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, সিএসডির ব্যবস্থাপকরা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে ঢাকা (খাদ্য অধিদফতরে) কীটনাশকের চাহিদা পাঠায়। এরপর ঢাকা থেকে সরাসরি সিএসডিতে ওষুধ পাঠানো হয়। কীটনাশকের কিছুটা সমস্যা থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যে দুই সিএসডিতে খাদ্য অধিদফতর থেকে কীটনাশক পাঠানো হবে বলে আমি জেনেছি।

পাঠকের মতামত: