ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জুম চাষের পরিবর্তে ড্রাগন ফলের চাষ

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান  ::  জুম চাষের পরিবর্তে পাহাড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের চাষ। বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছে অনেকে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর চাষী তোয়ো ম্রো। চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত পাড়ায় তিন একর পাহাড়ি জমিতে পাকা পিলারের পরিবর্তে ভিন্ন পদ্ধতিতে মেহগনি গাছের উপরের অংশ কেটে ৪৬০টি গাছের গোড়ায় এক হাজার ৫৩০টি ড্রাগনের চারা লাগান এ চাষী। আঠারো মাসের ব্যবধানে দুটি মৌসুমে বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি করে আয় করেছে এগারো লাখ টাকা। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে তোয়ো ম্রো’র বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন ফল ব্যবসায়ীদের বদৌলতে বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম’সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে।
কৃষি বিভাগ জানায়, স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় বান্দরবানে জুম চাষ পরিত্যাগ করে বিদেশী ফল ড্রাগনের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে পাহাড়ি চাষীরা। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে ইতিমধ্যে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর চাষী তোয়ো ম্রো। জেলার চিম্বুক-নীলগিরি সড়কের বসন্তপাড়ায় প্রায় ২০ একর পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে।

এরমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পাহাড়ি জমিতে ৭৫টি পাকা পিলারের খুঁটিতে ৩শ ড্রাগন চারা লাগিয়ে ড্রাগনের চাষ সফলতা পান এ চাষী। ছয়মাস পর বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। লাভজনক হওয়ায় ২০১৭ সালে ভিন্ন পদ্ধতিতে বাগানের অপরপাশে সৃজিত তিন একর জমির বনজ মেহগনি গাছের উপরের অংশ কেটে ফেলে পাকা পিলারের পরিবর্তে কেটে ফেলা ৪৬০টি বনজ গাছের গোড়ায় ১৫৩০টি ড্রাগন ফলের চারা লাগান। এছাড়া ৫০টি পিলারের গোড়ায় ৩৩০টি ড্রাগন ফলের গাছের চারা রোপণ করেন।

চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত পাড়ার চাষী তোয়ো ম্রো বলেন, বাগানে দুই হাজার ড্রাগন গাছে ফল এসেছে। ইতিমধ্যে ড্রাগন ফল বিক্রি করে চার লাখ টাকার মত পেয়েছি। বাগানে আরও অনেক ফল রয়েছে। ছয় মাস সময় পর্যন্ত ১৮ থেকে ২১ দিন পরপর বাগান থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করা যাবে। বাগানে লাল, সাদা, গোলাপী এবং পিং চারটি রঙের ড্রাগন উৎপাদিত হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ টাকায়। তিনি আরও বলেন, ড্রাগন ফল একসময় এই অঞ্চলের মানুষেরা খুব একটা চিনতো না। ড্রাগন ফল সম্পর্কেও ধারণা ছিলো না অনেকের। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় ড্রাগনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আগামীতে এ ফলের চাহিদা আরো বাড়বে। আমার বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন ফল কিনে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম নিয়ে যাচ্ছে।

বসন্ত পাড়ার চাষী রেংরাং ম্রো বলেন, চাষী তোয়ো ম্রো হচ্ছে পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির পথ প্রদর্শক। তার অনুপ্রেরণায় এই অঞ্চলের জুম চাষীরা বর্তমানে ড্রাগন’সহ বিভিন্ন ধরনের মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। অলাভজনক জুমচাষ ছেড়ে দিচ্ছে ম্রো চাষীরা। তোয়ো’র বাগান থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে বসন্তপাড়া’সহ আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোর অনেকে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছে।
কৃষিবিদদের মতে, ড্রাগন ফল একধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। এ ফলের অন্য-নাম পিটাইয়া। চীনে এই ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটি প্রবর্তিত হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম নাজমুল হক বলেন, ড্রাগনের চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে বান্দরবান জেলায়। পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম এবং পানির সেচ কম লাগায় এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়িরা। বিদেশী ফল হলেও পার্বত্যাঞ্চলের জলবায়ু এবং মাটি দুটোই ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগন ফল একটি লাভজনক চাষ। কম পরিশ্রমে ছোট্ট জায়গার মধ্যেও ড্রাগন ফলের চাষ করা সম্ভব। শখের বসে অনেকে বাড়ির ছাদে এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে-পেছনে ড্রাগনের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: