ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

তিন চাকার নিষিদ্ধ যান চলছেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ইজিবাইক টমটম চলাচল করছে নির্বিঘ্নে

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: 

মহাসড়কে তিন চাকার (ত্রি-হুইলার) যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিনিয়ত এসব গাড়ির দেখা মিলছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, গত কয়েকবছর ধরে কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে ওঠেছে মৃত্যুফাঁদে। মূলতঃ তিন চাকার যানবাহনের পাশাপাশি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং অদক্ষ চালকের কারণেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে।

গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার অংশের প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে সরেজমিন দেখা যায় পরিবহন নৈরাজ্য। এ সময় মহাসড়কের বানিয়ারছড়া চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাড়া সড়কের অন্য কোথাও দেখা মেলেনি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এই সংস্থার সদস্যদের। মূলত হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেদারসে চলছে তিন চাকার এসব যানবাহন।

বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় মহাসড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চালক মনির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার মহাসড়কে তিন চাকার যেকোনো ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে, বিষয়টি জানেন কি-না?

এমন প্রশ্নের উত্তরে টমটমচালক মনির উদ্দিন বলেন, ‘এটা তো কয়েকবছর ধরে শুনে আসছি, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ওঠতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে মাঝে-মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশ অভিযানে নামে। এর পরেও তো দেখছি ঠিকই এসব যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করছে। তাই আমিও মহাসড়ক দিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করছি।’

মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী হাঁসেরদিঘি এলাকায় কথা হয় ইজিবাইক-টমটমচালক মিরাজ উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, প্রতিনিয়ত এই গাড়ি মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। এর পরও টমটম মহাসড়কে কেন?-এমন প্রশ্নে মিরাজ বলেন, ‘সবাই মহাসড়কে টমটম চালাচ্ছে। আমিও চালাচ্ছি। এতে দোষের কী আছে!’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবোঝাই ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানে চলছে তিন চাকার যান বিশেষ করে ইজিবাইক-টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমন, মাহিন্দ্র। এ ছাড়া একেবারে স্বল্প আকৃতির চার চাকার যানবাহনও যাত্রী পরিবহন করছে বেশি। এর মধ্যে লেগুনা, ছারপোকা, ম্যাজিক গাড়ি অন্যতম। চার চাকার এসব যানবাহনে চলাচলও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বরইতলী নতুন রাস্তার মাথায় স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় যাত্রীবাহী ছারপোকার। এই দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তিন নারীসহ প্রাণ হারায় সাতজন যাত্রী। আহত হয় অন্তত ১০ জন। একদিনের ব্যবধানে হারবাং ইনানি রিসোর্টের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে (মোড়) প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে যাত্রীবাহী ইজিবাইক-টমটমের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারীসহ চারজনের প্রাণ ঝরে যায়। একদিনের ব্যবধানে দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেক যাত্রী।

এসব বিষয়ে বানিয়ারছড়া চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ও মো. মাহবুব আলম (এসআই) চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক মহাসড়কে তিন চাকার কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। যেখানেই দেখা যাচ্ছে এই বাহন, সেখানেই অভিযান চালিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর পরও বিক্ষিপ্তভাবে তিন চাকার যান মহাসড়কে ওঠে পড়ছে অভ্যন্তরীণ সড়ক হয়ে।’

মহাসড়কের টমটম চলাচলকারী একজন চালক জানান, মহাসড়কে ত্রিহুলার যানবাহন চলাচলের বাধা দেয়ার জন্যে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও তাদের হাতে কিছু নগদ নারায়ন ধরিয়ে দিলেই নির্বিঘ্নে চলে সব ধরণের যানবাহন।

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে মহাসড়কের পালাক্রমে দুটি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করছে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে তিন চাকাসহ ধীরগতির কোনো যান মহাসড়কে চলাচল করতে দেওয়া উচিত নয়। তাছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মাথায় রেখে হাইওয়ে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

পাঠকের মতামত: