ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় ফোর মার্ডার, ২৫ দিনেও কার্যত কোন অগ্রগতি নেই

উখিয়া প্রতিনিধি ::  উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়াপাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সংগঠিত হওয়া চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২৫ দিন অতিবাহিত হলেও কার্যত তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। এ ২৫ দিনে কোন খুনীকে সনাক্ত করতে পারেনি। পারেনি হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে। মামলাটি গত অক্টোবর কক্সবাজার জেলা পুলিশ পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) হস্তান্তরের আগের দিন একজন মহিলা সহ সন্দেহজনক ২ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূলতঃ হত্যাকান্ডের পরদিন থেকে দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলায় বিবেচনায় আনার মতো কোন ক্লো গ্রেপ্তারকৃতদ্বয়ের কাছ থেকে পায়নি। তার একটি উজ্জল প্রমান হলো-এ মামলার দ্বিতীয় আইও (ইনভেস্টিগেশন অফিসার) উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আইও পরিবর্তনের পর পিবিআই এর নিয়োগকৃত আইও ইন্সপেক্টর পুলক বড়ুয়া গত ১৬ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে শুনানি করেন। শুনানিকালে আসামী রিপু বড়ুয়ার আইনজীবী রাষ্ট্র পক্ষ হতে জানতে চান কেন, কোন গ্রাউন্ডে রিপু বড়ুয়ার বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। তার উত্তরে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। একইভাবে গ্রেপ্তারকৃত উজ্জ্বল বড়ুয়ার আইনজীবী রাষ্ট্র পক্ষ থেকে জানতে চান, কোন গ্রাউন্ডে তার বিরদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। জবাবে রাষ্ট্র পক্ষ বলেছিলেন, উজ্জ্বল বড়ুয়া হতে কিছু হতে কিছু রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। সে জামাকাপড়ের লেগে থাকা রক্তের সাথে নিহত ৪ জনের রক্তের কোন মিল আছে কিনা, তা নির্নয়ের জন্য জামা কাপড় ও নিহতদের রক্ত ফরেনসিক ল্যাবর‍্যটরীতে পাঠানো হয়েছে। তখন আইনজীবী জানতে চান, ল্যাবর‍্যটরী টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া গেছে কিনা। জাবাবে রাষ্ট্র পক্ষ বলেন, ফরেনসিক ল্যাবর‍্যটরী টেস্ট রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক রিপোর্ট না পেতে আসামীর বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়ার আইনগত ভিত্তি নেই। তখন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন এজলাসে আদেশ নাদিয়ে ডকুমেন্টস দেখে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং হেলাল উদ্দিন রাষ্ট্র পক্ষের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাত্র একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পিবিআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ইন্সপেক্টর পুলক বড়ুয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো আসামীদের রিমান্ড মঞ্জুরকৃত একদিনের রিমান্ড করেছেন কিনা। তিনি জানান, এখনো চাওয়া হয়নি, মঞ্জুরকৃত রিমান্ড সুবিধামতো সময়ে করা হবে। মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশ থেকে পিবিআই কে হস্তান্তর করার পর মামলাটি হত্যার মোটিভ উদঘাটন, হত্যাকারী সনাক্ত করা গিয়াছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইও পরিদর্শক পুলক বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য গুলো পেয়েছি, তা যাচাই বাচাই করছি। এখনো আসামী সনাক্ত করার মতো পর্যায় পৌঁছাতে পারিনি।

এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার (বিপিএম-পিপিএম) গত ১৭ অক্টোবর বলেছিলেন-
চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের তদন্তে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে অপরাধ উদঘাটন বিশেষজ্ঞরা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করছে। এ হত্যাকান্ডকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। হয়ত একটু সময় লাগলেও হত্যাকারী ও হত্যার মূল কারণ উদঘাটন করা যাবে। কত দিনের মধ্যে খুনের প্রকৃত রহস্য বের করা যেতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছিলেন, সেটা এখনি সঠিক বলা যাচ্ছনা। তবে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, বর্তমান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ২০০৮ সালে কক্সবাজারে পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু ক্ষোভ প্রকাশ সিবিএন-কে বলেন-দীর্ঘ ২৫ দিনেও একসাথে একঔ পরিবারের চারজন খুনের কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় এলাকাবাসী হতাশায় ভুগছেন। এভাবে খুনীরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে থাকতে পারলে অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হবে। এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভূগবে। হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলার নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অবিলম্বে খুনীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

মামলাটি জেলা পুলিশের অধীনে থাকাবস্থায় গত ৯ অক্টোবর বুধবার উক্ত ২ জন আসামীকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তারের পর তৎকালীন আইও উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার এ দু’জনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উপাত্ত বের করার জন্য আদালতের কাছে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আবেদন করেছিলেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বুধবার ১৬ অক্টোবর রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেছিলেন। পরে ১০ অক্টোবর মামলাটি পিবিআই’কে কক্সবাজার জেলা পুলিশ হস্তান্তর করলে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ইনস্পেকটর পুলক বড়ুয়াকে নতুন আইও (ইনভেস্টিগেশন অফিসার) নিয়োগ দেয়। গত বুধবার ১৬ অক্টোবর রিমান্ড শুনানীতে পিবিআই এর নিয়োগ করা নতুন আইও ইনস্পেকটর পুলক বড়ুয়া রাষ্ট্র পক্ষে অংশ নেন।

মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের তত্বাবধানে থাকাবস্থায় প্রথমে উখিয়া থানার এসআই ফারুক হোসেনকে, পরে একই থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারকে ২য় আইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

প্রসংগত, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ২ জনকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ গত ৯ অক্টোবর গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া (২৮) ও অপরজন হলো রোমেল বড়ুয়ার পুত্র উজ্জ্বল বড়ুয়া (২৪)।
গ্রেপ্তারকৃত ২ জনই রোকেন বড়ুয়ার নিকটাত্মীয়। তারমধ্যে, রিপু বড়ুয়া হচ্ছে-প্রবাসী স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার সেজ ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী এবং ফোর মার্ডারে নিহত সনী বড়ুয়ার (৬) মা। অপর আসামি হলো রোকেন বড়ুয়ার ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল বড়ুয়া। উজ্জ্বল বড়ুয়ার বাড়ি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকোট এলাকায় অবস্থিত। উজ্জ্বল বড়ুয়াকে গত মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার শ্বশুরবাড়ি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে রিপু বড়ুয়াকে তার স্বামীর বাড়ি পূর্ব রত্নাপালং এর বড়ুয়া পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত্রে রোকন বড়ুয়ার মা সুখী বালা বড়ুয়া (৬৫), সহধর্মিণী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)কে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এরমধ্যে, নিহত রবিন বড়ুয়া রুমখা সয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্র এবং সনি বড়ুয়া একই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।

এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকেন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়েছেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

পাঠকের মতামত: