ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রূপপুর কেলেঙ্কারি: গণপূর্তের ১৬ কর্মকর্তা বরখাস্ত, ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ::  রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গণপূর্তের ১৬ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।

সাময়িকভাবে বরখাস্ত কর্মকর্তারা হলেন—রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী মো. রুবেল হোসাইন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. রওশন আলী, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফজলে হক, সুমন কুমার নন্দী, মো. রফিকুজ্জামান, মো. জাহিদুল কবীর, মো. শাহীন উদ্দিন, মো. আবু সাঈদ ও মো. শফিকুল ইসলাম।

এ ছাড়া গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে হাইকোর্টে ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠানোর খরচ দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-২) মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রথমে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। এরপর তা হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য গত ১৫ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। গত ২১ জুলাই এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।

গত ১৬ মে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য একটি বৈদ্যুতিক চুলার দাম ধরা হয়েছে সাত হাজার ৭৪৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা, একটি বালিশের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৭৩০ টাকা। একটি বৈদ্যুতিক কেটলির দাম পাঁচ হাজার ৩১৩ টাকা, যা তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা। একটি টিভির দাম ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা, তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে সাত হাজার ৬৩৮ টাকা, এই টিভি রাখার কেবিনেটের দাম ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭৮ টাকা।

পাঠকের মতামত: