ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিম চৌফলদন্ডী স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু

সোয়েব সাঈদ, রামু  ::  কক্সবাজার সদর উপজেলার পশ্চিম চৌফলদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহমানের অনিয়ম-দূর্ণীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। অসংখ্য অনিয়ম-দুর্ণীতি দেখিয়ে এলাকার অভিভাবক ও সচেতন জনসাধারণ দু’মাস পূর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-০২ এর উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে গত রবিবার (১৩ অক্টোবর) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আজম, জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল আজম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন, ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবু শামীম অভিযোগ সমূহ তদন্তের জন্য ওই বিদ্যালয়ে যান।

পশ্চিম চৌফলদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম জানান, রবিবার জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ৪ জন কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দূর্ণীতির তদন্তের জন্য বিদ্যালয়ে যান। এসময় অভিভাবকসহ এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্ণীতির তথ্য তদন্তকারি কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। অর্থাৎ তদন্তকারি কর্মকর্তারা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন।

জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল আজম জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। তদন্ত প্রতিবেদনে সব উল্লেখ করা হবে।

এদিকে দুদক সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিভাবকদের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক হামিদুর রহমান এ বিদ্যালয়কে নিজের গৃহে পরিনত করেছেন। একাধিক শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্য প্রধান শিক্ষকের নিকটাত্মীয় হওয়ায় এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতার জোরও বেশী। যে কারনে প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম-দূর্ণীতি করলেও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

সূত্রমতে, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকটাত্মীয় ৩ শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন, মামা শাশুড় নুরুল হক, শ্যালক জাহেদ ও মামী শাশুড়ি আসমাউল হোসনা। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের ৩ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে রয়েছেন, অভিভাবক প্রতিনিধি মামী শাশুড়ি লুৎফুন্নাহার, মাধ্যমিক শিক্ষক প্রতিনিধি স্ত্রীর বড় বোন সেলিনা আকতার ও শিক্ষক প্রতিনিধি মামা শাশুড় নুরুল হক।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে হামিদুর রহমান পশ্চিম চৌফলদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৭ বছর তিনি সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়টিকে দূর্ণীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক শিক্ষিতা শ্লীলতাহানির শিকার হন।

লিখিত অভিযোগে অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক নিজেই বিদ্যালয়ে ভর্তি, বই বিতরণ, পিএসসি রেজিস্ট্রেশন ফি,উপবৃত্তির ছবি তোলা পিএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীদের সনদ বিতরণ, প্রবেশপত্র, ভুয়া সনদ ও প্রশংসা পত্র বিক্রি বাবদ ইচ্ছেমত অর্থ আদায় করে থাকেন। কোন গরীব শিক্ষার্থী উপরোক্ত ফি দিতে অপারগ হলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উক্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন। নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য আসা সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উন্নয়নে যথাযথ ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেন তিনি।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রেণী ভিত্তিক ভর্তি ফ্রি ও বই বিতরণে জনপ্রতি ১শ টাকা থেকে ৩ শ টাকা পর্যন্ত আদায়, পিএসসি রেজিস্ট্রেশনে জনপ্রতি ১৫০ টাকা,পিএসসির প্রবেশ পত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা, সনদপত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা, প্রশংসা পত্রে জনপ্রতি ২শ টাকা,উপ বৃত্তির ছবি তোলায় জনপ্রতি ৩০ টাকা ও ভুয়া সনদ এবং প্রশংসা পত্র বিক্রি করে ইচ্ছামত।

পাঠকের মতামত: