ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ৫শ কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস করেছে রোহিঙ্গারা

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে ::  পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে আগত ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের নয়নাভিরাম বনভূমির ৪৩১৮.১০ একর বনভূমিতে বসতি গড়ে তুলেছে। এতে ১৯৯৯.৫০ একর বনভূমির সৃজিত প্রধান সামাজকি বনায়ন এবং ২৩১৮.৬০ একর প্রাকৃতকি বন ধ্বংস করেছে রোহিঙ্গারা। এ বনজ সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হবে বলে বনবিভাগ সুত্রে দাবী করা হয়েছে।

বন বিভাগের মতে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বনজ সম্পদের মধ্যে হরেক প্রজাতির বনজ সম্পদ রয়েছে। এ বনজ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে, একদিকে নির্বিচারে হরেক প্রজাতির বৃক্ষরাজি কেটে বসতি স্থাপন, অপরদিকে এ বিপুল পরিমান জনগোষ্টির রান্না-বান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার কারণে এ মূল্যবান বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। এ দাবী এলাকার পরিবেশ সচেতন জনগোষ্টির।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন সরকারী বনাঞ্চলে ১৯৭০-১৯৭১ সন হতে অবৈধ ভাবে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়হীন জনগন প্রাকৃতিক বিভিন্ন সমস্যাদির কারণে সরকারী বন ভূমি জবরদখল করে বসবাস শুরু করে।

মায়ানমার-বাংলাদশেরে সীমানা দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে নাফ নদীর মাধ্যমে চিহ্নিত ৬৪ কিলোমিটার এবং অবশষ্টি ২০৮ কিলোমিটার উচু নীচু ভূমি দিয়ে বিভাজিত। মায়ানমার অংশের অধিকাংশ স্থানে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও বাংলাদেশ অংশে প্রাকৃতিক বাউন্ডারী সমুদ্র ও নাফ নদী ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে নাফ নদীর অংশ দিয়ে জলপথে এবং অন্যান্য অংশ দিয়ে পায়ে হেঁেট সহজেই মায়ানমার হতে বাংলাদেশে প্রবশে করা যায়।

বিভিন্ন সময়ে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় তাদরেকে কক্সবাজাররে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরর্নাথী ক্যাম্পে পুর্নবাসন করা হয়। এর বাইরেও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা শরর্নাথী ক্যাম্পেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বসতি স্থাপন করে। উক্ত ক্যাম্প ৪টি কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের ভিতরে। এ সুযোগে রোহিঙ্গারা সংরক্ষিত বনজ সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গাছ , লতা, গুল্ম, সানগ্রাস, উলুফুল, বাঁশ, বেত, ঔষধিগাছ সহ অন্যান্য আগাছা জাতীয় প্রজাতিও ধ্বংস করে ফেলে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ বনবিভাগের সংরক্ষিত বনের মধ্যে ৫৩৬ প্রজাতির উদ্ভিদ,৬১৩ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। উদ্ভিদের মধ্যে ১৪২ প্রজাতির গাছ, ১১২ প্রজাতির গুল্ম, ১৮৪ প্রজাতির বিরূৎ, ৮৭ প্রজাতির লতা, ১০ প্রজাতির অর্কিড এবং ১ প্রজাতির পরজীবি রয়েছে। অনুরূপভাবে প্রাণীর মধ্যে ১৯৮ প্রজাতির অমেরুদন্ডী, ৪৮ প্রজাতির মাছ, ২৭ প্রজাতির উভচর, ৫৪ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৪৩ প্রজাতির পাখী এবং ৪৩ প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।

বড় বৃক্ষের মধ্যে গর্জন, তেলশুর, চাপালিশ, সিভিট, মুস প্রভৃতি এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে অনন্য সাধারণ এশিয়ান হাতী, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, গন্ধ গোকুল, সজারু, শিয়াল, বন্য শুকর, বানর, হনুমান, ধনেশ পাখী, বড় আকারের ধূসর কাঠ ঠোকরা অন্যতম।

বর্তমানে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের এক সময়ের বনজ সম্পদে ভরপুর পাহাড় গুলো এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিনত হয়েছে। আগের মত বৃক্ষরাজি এখন আর চোখে পড়েনা। যার পেছনে একমাত্র কারন হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ।

পাঠকের মতামত: