ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেশের মানুষ ফুসে উঠছে, আবরারের রক্ত বৃথা যাবে না: বিএনপি

নয়াপল্টনে সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ছবি: চকরিয়া নিউজ

নিউজ ডেস্ক ::  ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ভারতের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এর বিরুদ্ধে গণঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

আজ শনিবার বিকালে এক সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। দেশবিরোধী চুক্তি করায় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবরারের রক্তে আধিপত্যবাদ সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বীজ বোপিত হয়েছে। আবরারের কথা এ দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তার রক্ত জনগণ বৃথা যেতে দেবে না।

নেতারা আরও বলেন, দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে আরও কর্মসূচি আসবে। নেতাকর্মীদের বলব, ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, এই সরকারের পতন হবেই।

ভারতের সঙ্গে করা চারটি চুক্তিই দেশের স্বার্থবিরোধী দাবি করে বিএনপি নেতারা বলেন, ফেনী নদীর পানি দেয়া হলে মুহুরী প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর ভারত ব্যবহার করলে দেশের ব্যবসায়ীদের মালামাল খালাসে সময় বেশি লাগবে। সমুদ্রসীমানায় যৌথভাবে রাডার বসালে আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলপিজি গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি করলে তারা লাভবান হবে।

দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও প্রকেৌশল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুইদিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশহিসেবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হয়।

ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। পূর্বঘোষিত হলেও সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি পায়নি বিএনপি।

মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও উত্তর-দক্ষিণের দুই সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও আহসান উল্লাহর পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয় মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, শফিউল বারী বাবু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাদেক আহমেদ খান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মোরতাজুল করিম বাদরু, হাসান জাফির তুহিন, হেলেন জেরিন খান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফেনীর নদীর পানি সরবরাহ, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যবেক্ষণে যৌথ রাডার স্থাপন, আমদানিকৃত এলপিজি রফতানি করা- এই চারটি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে আমরা মনে করি।এই চারটি চুক্তির একটিও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে নয়। আপনাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং ভারত তোষণের নীতি হিসেবে আপনারা এ সব চুক্তি করে এসেছেন। উদ্দেশ্য একটাই গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য এ সব চুক্তি।

সরকারের ভারতপ্রীতি নীতির কঠোর সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশের আমদানি করা এলপিজি দিয়ে ২০০১ সালে সেই যে আপনি গ্যাস দেননি সেটার আপনি খেসারত দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্ন সবার। চুক্তির প্রতিবাদ করে আবরার একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এ জন্য তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবরারের এই স্ট্যাটাস এ দেশের জনগণের মনের কথা, এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষের কথা, আবরারের এ কথা এ দেশে আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য এ দেশে আগামী দিনে যে সমস্ত কর্মসূচি আসবে আপনারা সাহসের সঙ্গে আজকের মতো সফল করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ দেশের জনগণকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারব এবং ইস্পাত কঠিন গণঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিবাদের পতন হবে না। ইনশাআল্লাহ, সেই ফ্যাসিবাদের পতন হবেই।

মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। তারা এমন ফাঁদে পড়েছে, সেই ফাঁদ থেকে তাদের কোনো নিষ্কৃতি নেই। এই ফাঁদ থেকে তারা উঠে আসতে পারবে না। আমি মনে করি, এই সরকারের পতন এখন সময়ে ব্যাপার। এই দেশের মানুষ কখনও এই ধরনের সরকারকে বরদাশত করতে পারে না। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিরও সমালোচনা করেন সাবেক এ আইনমন্ত্রী।

মির্জা আব্বাস বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিনিময়ে চুক্তি হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একতরফা দান করে দিয়ে আসলেন। আমি অত্যন্ত গর্বিত আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী দান করতে জানেন। আবার অত্যন্ত লজ্জিত আমি দেখলাম ভারতের বিমানবন্দরে লাল কার্পেট নেই, এক প্রতিমন্ত্রী তাকে (শেখ হাসিনা) অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। আমি লজ্জা পেয়েছি, জাতি লজ্জা পেয়েছে, দেশ লজ্জা পেয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গেছেন, সেখানে আমাদের ইজ্জতে লেগেছে, আমাদের মানহানি হয়েছে।

পাঠকের মতামত: