ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে : রিজভী

ডেস্ক নিউজ ::  সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, যারা আজ দেশবিরোধী চুক্তি আর শহীদ আবরারের বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন তাদের প্রতি আহ্বান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা অবিচল থাকুন। বিজয় আপনাদের সুনিশ্চিত।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ আজ স্ফুলিঙ্গের মতো জেগে উঠেছে। দেশের মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ করে আর দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে গত একদশক ধরে যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে, এটি জনগণ আর চলতে দেবে না। দেশের ছাত্র সমাজ এসব অনাচার আর মেনে নেবে না। সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে।’

শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের স্লোগানের ভাষা শুনুন। ক্ষমতাসীনদের জুলুম এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের রক্তে আগুনজ্বলা দ্রোহ দেখুন। জনগণের আওয়াজ শুনুন। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়াজ উঠেছে, আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে। আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে। কোনো আন্দোলন যেমন ব্যর্থ হয় না তেমনি দেশবিরোধী চুক্তি ও শহীদ আবরারের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না ইনশা আল্লাহ।’

রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে সরকার ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত বুধবারে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দায় এড়ানোর জন্য বললেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়। তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে হয়তো তাই লেখা রয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বিপদে পড়লেই জনগণকে ধোকা দিতে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয় এই কথা বললেও দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয় প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভবন-গণভবনে বসে। আবার গণভবনে বসেই ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতার নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র, হাতুড়ি, চাপাতি, লগি, বৈঠা দিয়ে বিরোধী মতের ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়, পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রলীগ এখন নৃশংস হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছাত্রলীগের জঙ্গিদের হাতে আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু প্রমাণ করেছে, একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে ছাত্রলীগকে জঙ্গি সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। এখন ছাত্রলীগকে তৈরি করা হয়েছে বধ্যভূমির ঘাতক হিসেবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘বার বার ভারতে সফরে গিয়ে অসংখ্য দেশবিরোধী চুক্তি করে আসছেন বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী। জনগণ জানতেও পারছে না কী চুক্তি হচ্ছে, কেন হচ্ছে এইসব চুক্তি? এইসব চুক্তিতে কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে? জনগণের দল হিসেবে বিএনপির স্পষ্ট দাবি, ভারতের সাথে গত এক দশকে কী কী চুক্তি হয়েছে, কত চুক্তি হয়েছে, প্রতিটি চুক্তি সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত জানাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই মিথ্যাবাদী রাখাল সরকারের আশ্বাস বিশ্বাস করলে শহীদ আবরারের হত্যাকারীদের বিচার হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্দোলন কেন? আমি একজন মা হিসাবে আবরার হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছি।’ কিন্তু উনি যদি আবরারের মা হন তাহলে তিনি প্রথমেই দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করবেন এবং আবরারের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেবেন। আর ছাত্রলীগকে হত্যা ও ঘাতকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাদের অমানুষ না বানিয়ে হাতে বই-খাতা তুলে দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘অন্যায় চুক্তির প্রতিবাদ করার অপরাধে শুধু আবরারকে একাই পিটিয়ে মারা হয়নি। আগ্রাসনের বিরোধিতা ও বাক স্বাধীনতাকেও পিটিয়ে মারা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের মসনদ রক্ষার জন্য প্রতিবেশী দেশের দাসত্ব ও অন্ধ দালালিকে তাদের চেতনা হিসাবে গ্রহণ করেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই স্বাধীন দেশে ভিসিরা ‘জয়হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে পাচ্ছে পুরস্কার, আর আওয়ামী লীগের নেতারা পর্যন্ত অন্যায় চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বললে দল থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিবেকের তাড়নায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। তাকে গতকাল বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। ’

পাঠকের মতামত: