ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে কক্সবাজার জেলায়

 শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার ::  কক্সবাজারে দিন দিন সকল ধরনের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘটে চলেছে খুন, যৌনহয়রানি, বাল্য বিবাহ, জমি দখল, মারপিট, চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আর এই সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উঠতি বয়সের ছেলেরাই বেশী জড়িয়ে পড়েছে।

গত কযেক মাসের ব্যবধানে খুন হয়েছে দুটি। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়া পালংয়ের ইনানীর আলাদ্দিন নামের একজনের ছুরিকাঘাতে উপজেলার মরিচ্যা গোরিয়া দ্বীপ রাস্তার মাথায় মাজহারুল ইসলাম নামের এক এনজিও কর্মী খুন হন। মোটরসাইকেল যোগে যাওয়ার সময় ঐ এলাকায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়, এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত উখিয়া হাসপাতালে পাঠান তিনি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে কোমলমতি দুই শিক্ষার্থীসহ তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী নিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)। গত ককয়েক বছর আগে প্রেম ঘটিত কারণে চকরিয়ায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মোরশেদ আলী (২৫) নামের এক কলেজ ছাত্র খুন হন। মাগরিবের পর হঠাৎ ১৫-২০জন যুবক তার বাড়ীতে ঢুকে পরিবারের সবাইকে কোনঠাসা করে কলেজ ছাত্র মোরশেদকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। মোরশেদ মাটিতে লুটে পড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় মুমুর্ষ মোরশেদকে চকরিয়া পৌর সদরের ইউনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

ইভটিজিং ১৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে গ্যাং কালচার ও ইভটিজিং করার দায়ে শহরের সরকারি বালিকা স্কুল, বায়তুশ শরফ জাব্বারিয়া স্কুল ও সরকারি মহিলা কলেজের সামনে অভিযান চালিয়ে আশরাফ (২০), সাদ্দাম হোসেন (২৪), মো. ইব্রাহিম (১৮), আহমেদ আরেফিন (১৮), মিজানুর রহমান (২২), শাহাজাহান (২৮), কায়সার মুল্লা (৩৩), মোহাম্মদ ওমর ফারুক (১৮), আরাফাত হোসেন(১৮), মো. ইদ্রিস (২২), নুরুল ইসলাম(১৮), জানে আলম (২৪), মো. রিয়াদ (১৭), আবসার মিয়া (২০), ওবাইদুল হাসান (২০), রাসেল (১৮), শরীফুল ইসলাম (১৯) ও আরাফাত (১৯)। ১৮ জনকে আটক করা হয়। জমি দখল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সি-ইন পয়েন্টে বালিয়াড়ি দখল করে ঈদুল ফিতরের আগের দিন এবং তারপরের দিন, এই দুই দিনে নির্মাণ করে প্রায় ৩৫টি অবৈধ দোকান।

সচেতন মানুষের তোপের মুখে পড়ে প্রশাসন পৃথক অভিযান চালিয়ে ২০/২৫টির মতো অবৈধ টিনের বেড়া অপসারণ করে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করেন। চুরি গত রবিবার রাতে রামু উপজেলার রাজারকুলে হিন্দুপাড়ার শ্রী কমলের বাড়ি থেকে তালা ভেঙে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চুরি করে নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার এমদাদিয়া মাদরাসা মসজিদের পাশে মোটরসাইকেল রেখে নামাজ পড়তে গেলে বাবু নামে একজন গরু ব্যবসায়ীর বাজাজ সিটি ১০০ সিসি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়।

এ ছাড়া শহরের নিজ বাসার সামনে মোটরসাইকেল রাখার পাঁচ মিনিটের মাথায় ফরিদ নামে এক সাংবাদিকের পালসার মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। রামু বাজার এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে উমর ফারুক নামে এক ব্যবসায়ীর ডিসকোভার মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিয়ে। প্রকাশ্যে ও লুকিয়ে বাল্যবিয়ে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২২ এপ্রিল রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া গ্রামের ছবি আকতার নামে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় এক আত্মীয়ের দোকানে গভীর রাতে ঘরোয়াভাবে কাজী ডেকে বিয়ের রেজিস্ট্রি করা হয়।

গত রবিবারে দুছড়ি সবজি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন তার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বিয়ের আয়োজন করে। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে মেয়ে দেখার আয়োজন করা হয়েছে বলে মেয়ে পক্ষের লোকজন কৌশলে এড়িয়ে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মারপিট ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মিঠাছড়ি গ্রামে মোশারফ নামে এক এক কলেজ ছাত্রকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে স্থানীয় মাদক কারবারিরা। হাসান নামে স্থানীয় এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরে দেওয়ার সন্দেহে মোশারফকে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে ওই মাদক কারবারির ছেলে ও তার সহযোগীরা। দুই মাস আগে পাহাড়ি জনপদ ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ডাকাতির পর মাহবুবুর রহমান (৩০) এক যাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে চাঁদার দাবি করে বেদমভাবে মারপিট করে।

পরে থানা পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। সম্প্রতি কক্সবাজার সরকারি কলেজের নেতাসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিরাগত সংঘবদ্ধ লোকজন পিটিয়ে আহত করেছে। এমতাবস্থায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অপরাধ প্রবণতা চরমহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।

নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল চকরিয়া নিউজকে জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম আইন শৃঙ্খলা সভায় মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিংসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সকলে সজাগ থাকলে আগামীতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে।

সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার চকরিয়া নিউজকে জানান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে মার্ডার মামলার আসামি গ্রেপ্তার এবং আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

বাল্যবিবাহ ও যৌনহয়রানির ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া অপরাধ দমনে থানা পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে এবং তা অব্যহত থাকবে।

পাঠকের মতামত: