ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাঘে মহিষে যখন একঘাটে জল খায়, জেলার রাজনীতিতে স্বস্তি

নিউজ ডেস্ক ::   আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। কক্সবাজারের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক আরো অনেক গুণাবলীসম্পন্ন। সাবেক সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রদূত মরহুম আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ত্যাগ ও সমাজসেবা আজ সর্বজনবিদীত। কক্সবাজারকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদান তাঁকে নিঃসন্দেহে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। তাঁরই ৩ পুত্র ৪ কন্যা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল।

তবে রাজনীতিতে সক্রিয় ২ পুত্র ও ১ কন্যা। প্রথম পুত্র সোহেল সরওয়ার কাজল রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকবারের সভাপতি, দু’বার রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১ বার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল পর পর দু’বার জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছেন। ছিলেন সোনালী ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক। বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে থেকে অবদান রেখেছেন অনেক। একজন ভাল বক্তা হিসাবে সবার কাছে সুপরিচিত। তৃতীয় পুত্র তানভীর সরওয়ার রানা একজন আর্ট শিল্পী। আর্ট শিল্পের সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। তাঁর নিজের গড়া স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার আর্ট ক্লাব।

রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা একমাত্র কন্যা নাজনীন সরওয়ার কাবেরী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। রাজনীতির ময়দানে খুবই সক্রিয়। কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিয়ে হয়েছিল কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বুনিয়াদি রাজনৈতিক পরিবার রামু’র জোয়ারিয়ানালা নিবাসী, তৎকালীন মহকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আবছার কামাল চৌধুরীর সন্তান আসিফ কামাল চৌধুরীর সাথে। আসিফ কামাল চৌধুরী ১০ বছর আগে অকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নাজনীন সরওয়ার কাবেরীর ননদ। আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর অপর ৩ কন্যা কানিজ, কুমকুম গৃহীনি, কনিষ্ঠ কন্যা রুনা আমেরিকায় থাকেন। আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সহধর্মিণী ছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের কন্যা রওশন সরওয়ার। প্রায় ৩ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন।

কক্সবাজারবাসীর গর্বের ধন মরহুম আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর প্রথম পুত্র সোহেল সরওয়ার কাজল ও দ্বিতীয় পুত্র আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কক্সবাজার সদর-রামু’র কমবেশি সবার জানা। দু-ভাইয়ের মধ্যে সাপে-নেওলে সম্পর্ক যেন শুধু কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ নয়, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগও এ বিষয়ে অবহিত আছে। বড়ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল সে মনোনয়নকে না মেনে নিজে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। একইভাবে রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ থেকে সোহেল সরওয়ার কাজলের অনুসারী হিসাবে পরিচিতদের মনোনয়ন দেওয়া হলেও প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল অনুসারী হিসাবে পরিচিতদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানো হয়।

গত ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ, একুশে পদক প্রাপ্ত পন্ডিত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরো পরলোক গমন করেন। অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথেরের মরদেহ এমব্যুলেন্স যোগে রামুতে আনা হয় পরদিন ৪ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩ টার দিকে। অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথেরের মৃতদেহ রামু বাইপাস মোড়ে পৌঁছার আগেই সেখানে জামায়েত হয় শত শত মানুষ। সেখানে অগ্রগামী হয়ে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল চির বৈরী দু’ভাই একত্রে হেঁটে গিয়ে অধ্যক্ষ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথেরের মৃতদেহ রিসিভ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ দৃশ্য দেখে তাদের দু’জনের অনুসারী অনেক রসিকজন মন্তব্য করেছেন এভাবে “বাঘে মহিষে একঘাটে জল খাবে” সেটা আমারা কোনদিন কল্পনাও করিনি। আবার অনেকে বলেছেন-অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথেরের মৃতদেহ দা-কুমড়া সম্পর্কের চিরশত্রু দু’ভাইকে সাময়িকের জন্য হলেও মিলাতে সক্ষম হয়েছে। সবসময় না হলেও কিছুক্ষণের জন্য বৈরী দু-ভাই এর একত্রে যাত্রা উভয়ের অনুসারীদের প্রেরণা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ করেছে। পুরো রামু- কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশা এভাবেই সারাজীবন থাকুক দু’ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল ও সাইমুম সরওয়ার কমল সহ পুরো ওসমান সরওয়ার আলম পরিবার।

পাঠকের মতামত: