ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার-১, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের নির্বাচিত মন্ত্রী-এমপিদের সুখ-দূ:খের কাহিনী (শেষ পর্ব)

জাকের উল্লাহ চকোরী. নিজস্ব প্রতিবেদক ::

অবিভক্ত বাংলা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিগত ৮৩ বছরের ৩ অধ্যায় নিয়ে এ প্রতিবেদনটি লেখা হবে। এ প্রতিবেদনটি লিখতে আমাকে সার্বিক ভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন, তারা হলেন আমার দীর্ঘদিনের সহযোগী চকরিয়া সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির অর্থসম্পাদক মো.সাইফুল ইসলাম খোকন ও চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে অধ্যায়নরত আমার বড় ছেলে শাকিলোর রহমান শাকিল।

তথ্য সূত্র- আমার ৪০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের পুরানো পত্রিকা, বিভিন্ন বই ও ম্যাগাজিন থেকে এ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। প্রতিবেদন গুলো ধারাবাহিক ভাবে চকরিয়া নিউজ ডটকম’এ প্রকাশ করা হবে। প্রতিবেদন গুলো সংশোধন ও পরিবর্তন যোগ্য। পরবর্তীতে লিটল ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ যদি আমাকে এতদিন বাঁচিয়ে রাখেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন-

নবম নির্বাচন-

১৯৭০ সালে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের এডভোকেট জহিরুল ইসলাম চকরিয়া-কুতুবদিয়া এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে কক্সবাজার মহকুমার গর্ভনর নির্বাচিত করেন। এডভোকেট জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের মহকুমা ও জেলার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে বৃহত্তর চকরিয়া থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। বিএনপি নেতা মাহমুদুল করিম চৌধুরী, জাপা নেতা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ও জামায়েতে ইসলামী প্রার্থী অধ্যাপক এনামুল হক মঞ্জুর কাছ থেকে পর পর ৪ বার ভোটে হেরে গিয়ে তিনি আওয়ামীলীগ ছেড়ে ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণফোরামে চলে যান এবং তাকে ওই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত করেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় তার বাসায় রয়েছেন।

দশম নির্বাচন-

১৯৭৩ সালে চকরিয়া-কুতুবদিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন ডাক্তার শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী। তিঁনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের এক স¤্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় অনেক উন্নয়নের কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি চকরিয়ার বাইরে পরিবারসহ অবস্থান করায় তার ছবিটি বহু চেষ্টার পরও সংগ্রহ করা যায়নি।

একাদ্বশ নির্বাচন-

১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন দল করেন বিএনপি। এ দলের মনোনীয়ন নিয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে বৃহত্তর চকরিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পূর্বে তিনি ভাসানী ন্যাপ করতেন। বিএনপিতে যোগদানের পর তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রেীয় সভাপতি ছিলেন। পেকুয়া উপজেলার মগনামা গ্রামের মরহুম ঠান্ডামিয়ার ঔরসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তার বড় ছেলে শেফায়েত আজিজ রাজু পেকুয়া উপজেলায় পর পর ২ বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দ্বাদশ নির্বাচন-

১৯৮৬ সালে মরহুম প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টি নাম দিয়ে একটি দল ঘোষনা করেন। ওই পার্টিতে যোগদেন সাবেক ছাত্রলীগের ডাকসাইটের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি দল থেকে বৃহত্তর চকরিয়ায় এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মরহুম গোলাম কাদের ডেপুটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র রাজনীতি করার সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বিএলএফ কক্সবাজার জেলার কমন্ডার ছিলেন।

ত্রয়োদশ নির্বাচন-

১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে এএইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ পুনরায় বৃহত্তর চকরিয়া থেকে দ্বিতীয় বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। এ সময় মরহুম প্রেসিডেন্ট এরশাদ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করলে তিঁনি কক্সবাজার জেলার প্রথম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ওই সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ মর্যদা ছিল উপ-মন্ত্রীর। জেলার প্রথম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হওয়ায় কক্সবাজার জেলাবাসী তাকে যে বিরল সম্মাননা দিয়ে ছিলেন তা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। লামার আজিজনগর সীমান্ত এলাকা থেকে কক্সবাজার লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত শতশত তোরণ নির্মিত হয়েছিল জনতার পক্ষ থেকে। বর্তমানে তিনি জাপা (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু)র প্রেসিডিয়াম সদস্য। নিন্দুকেরা বলেন, তিনি জাপা এরশাদ ত্যাগ না করলে মন্ত্রী হতে পারতেন। মৌলভী ইলিয়াছ এমপি হওয়ার সুযোগ পেত না।

চতুর্দশ নির্বাচন-

১৯৯১ সালে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর সাবেক ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হক মঞ্জু জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী হয়ে বৃহত্তর চকরিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আবদুল হক সাহেবের পুত্র।

পঞ্চদশ নির্বাচন-

বিএনপি’র চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস সালাহ উদ্দিন আহমেদ ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্ধীতা ছাড়া এমপি নির্বাচিত হন। তিনি পেকুয়ার স¤্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মৌলভী ছাঈদুল হক। তিনি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস থেকে অবসর নিয়ে বিএনপি’র রাজনীতিতে অংশ নেন।

ষষ্ঠদশ নির্বাচন-

কক্সবাজার-১, চকরিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সপ্তদশ নির্বাচন-

২০০১ সালের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর তিনি একমাত্র ব্যক্তি যাকে দল থেকে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। তার আমলে বৃহত্তর চকরিয়ার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে পেকুয়াকে নতুন উপজেলা হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর কক্সবাজার জেলায় স্বরণকালের উল্লেখ যোগ্য উন্নতি সাধন হয়।

অষ্টদশ নির্বাচন-

সালাহ উদ্দিন আহমেদ কারাগারে থাকায় তাঁর পক্ষে ৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তার সহধর্মিনী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ ২৯ডিসেম্বর ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে সংসদ নির্বাচিত হন। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

উনবিংশ নির্বাচন-

কক্সবাজার-১,  (চকরিয়া পেকুয়া) থেকে জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ এর সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে। তিনি ওই সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

বিংশ নির্বাচন-

১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর কক্সবাজার-১, আসনটি বিগত ৪৩ বছর ধরে আওয়ামীলীগের হাত ছাড়া ছিল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশব্যাপী যে মডেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সে মডেলের নির্বাচনে ৪৩ বছরের ইতিহাসের রেকর্ড় ভঙ্গকরে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক চকরিয়া পৌরসভার মেয়র, সাবেক চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বিএ (অনার্স) এমএ বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পালাকাটা গ্রামের মরহুম লাল মিয়া সওদাগরের কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি নির্বাচিত হওয়ার এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বর্তমানে চকরিয়া পেকুয়ার হাজার হাজার মানুষ রাতদিন তার বাসায় উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা তার কাছে তুলে ধরছেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রার্থীদের নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন শীগ্রই আসচ্ছে।

পাঠকের মতামত: