ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় ফোর মার্ডারে আপেল নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি !

ঘাতক অবশ্যই পরিচিত এবং কাছের কেউ : রোকেন

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া ::

কক্সবাজারের উখিয়ায় একই পরিবারের নারী-শিশুসহ ৪ জনকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৭ দিনেও রহস্যের জট খুলেনি। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আপেল নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সরকারি আইনশৃংখলা বাহিনীর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার ক্লু বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসলেও এখনো কারো পক্ষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়ননি।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্বজনহারা প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার সাথে দীর্ঘক্ষণ হত্যাকান্ড নিয়ে আলাপ হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোকেন বড়ুয়া বলেন, প্রশাসন তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দিলেও ঘাতক এখনো ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে তার মাঝে।

রোকেন বলেন, গত রোববার ঘর পরিস্কার করার সময় আমার রুমে যেখানে আমার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া খুন হয়েছে সেখানে চেয়ারের উপরে ১ কেজি আপেল পাওয়া যায়। অথচ ঘটনার দিন কোটবাজার থেকে মিলা আধা কেজি আপেল ও ছেলের জন্য ঔষধ কিনেছে। সেগুলো এখনো রান্নাঘরে অক্ষত আছে। এখন সন্দেহ হচ্ছে এই ১ কেজি আপেল নিয়ে কে বা কারা আমার বাড়িতে এসেছিল তা খোঁজে বের করতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, ঘাতক অবশ্যই পরিচিত এবং কাছের কেউ। বেড়াতে আসার ভান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানায়।

রোকেন, কান্না করতে করতে বলেন, তার পরিবারের সাথে গ্রামবাসির কারো সাথে কোন ধরণের বিরোধ ছিলনা। তবে ঘটনার দুই-চার দিন আগে থেকে বসতভিটার গাছ কাটা নিয়ে সামান্য বিতর্ক হয়েছে।

রোকেনের হৃদয়বিদারক কথা শুনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, যারা দুধের শিশুকে হত্যা করতে পারে তারা কখনো মানুষ হতে পারেনা, তাই এই সব জানোয়ারদের অচিরেই খুঁজে বের করা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, নৃশংস এই হত্যাকান্ড মানুষের অন্তরে দাগ কেটেছে। তাদের যেকোন ভাবে আইনের আওতায় আনার জন্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় জনসাধারণকে আহবান জানান। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা, মোঃ আলমগীর এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পূর্বরত্না আনন্দ ভবন বিহারে নিহতদের উদ্দেশ্যে সংঘদান অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদক প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, অষ্টপরিস্কার উৎসবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার বেশ কিছুক্ষণ হত্যাকান্ড নিয়ে আলাপ করেন। পরে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি, পাষবিক এই হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের খোঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ মামলায় নিরীহ কেউ যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্যও উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল মনসুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুলিশসহ একাধিক টীম সর্বোচ্চ তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় ঘাতক কে আমরা সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই জটিল। এখনো বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। তবে হত্যাকান্ডের মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে সমস্ত তথ্যাদি শর্টিং করা হচ্ছে। অচিরেই চুড়ান্ত ফলাফল বেরিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)।

পাঠকের মতামত: