ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

এবার হুইপপুত্র শারুনের গুলিবর্ষণের ভিডিও ভাইরাল

ডেস্ক নিউজ ::  বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও তার ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা দিদারুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে অশ্লীল বাক্যবিনিময়ের অডিও ফাঁসের পর এবার ভাইরাল হলো ভারী অস্ত্র দিয়ে পুরোপুরি সামরিক কায়দায় হুইপপুত্র শারুনের গুলিবর্ষণের ভিডিও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওটি হুইপ পরিবারকে নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে এ নিয়ে। অনেকে আবার এর মাঝে দেখছেন ষড়যন্ত্র।

Alizeh Murtaza : News (আলিজেহ মুরতাজা নিউজ) নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, পুরোপুরি সামরিক কায়দায় ৪৭ রাইফেল সাদৃশ্য আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি বর্ষণ করছেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন।

গত ১৪ ঘণ্টায় ভিডিওটি দেখা হয়েছে সাত হাজার ৯০০ বার। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের একজন সদস্য ও হুইপপুত্রকে ঠান্ডা মাথায় এমন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখে এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

এর আগে নগরের আবহানী ক্লাবে র‌্যাবের অভিযান নিয়ে মুখ খুলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। পরে একই ইস্যুতে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা দিদারুল আলম চৌধুরীকে টেলিফোনে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে অপমানের অডিও ক্লিপও ঝড় তোলে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শারুনের ওই ভিডিও-কে পুঁজি করে সরকারের সমালোচনায় মেতে উঠেছে একটি পক্ষ। তারা প্রশ্ন তুলছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। পরিকল্পিতভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।’

ভিডিওটির বিষয়ে বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি, চট্টগ্রামের একটি শ্যুটিং ক্লাবে অনুশীলনের সময় এ ভিডিওটি ধারণ করা হয়।

এর আগে ‘হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ক্লাবে জুয়ার আসর থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয় করেন’-এমন অভিযোগ এনে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মাহমুদ সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করা হয়। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে তদন্ত করে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের হুইপ শামসুলের ছেলে শারুন ও চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রবীণ নেতা দিদারুল আলমের টেলিফোন কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হলে দেশজুড়ে ঝড় ওঠে। হুইপের ছেলে শারুন দিদারুল আলম চৌধুরীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও রাস্তায় নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দেন।

হুইপকে নিয়ে যা বললেন দিদারুল আলম চৌধুরী

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা পরবর্তীতে গণমাধ্যমে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, পটিয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী একসময় ডবলমুরিং থানা যুবদলের সেক্রেটারি ছিলেন। পরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিও করেছেন। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এ সময় উপস্থিত অন্যদের ধরে নির্বাচনী প্রচারণার মাইক হাতে নেন শামসুল হক চৌধুরী। জিয়াউর রহমানের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে লাগামহীনভাবে গালাগালি করায় সেদিন জিয়াউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন শামসুল হক। সেদিন তার ‘বিচ্ছু শামসু’ নামটি দেন জিয়াউর রহমান।

দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, জিয়ার প্রডাক্টের কাছে কখনও বঙ্গবন্ধু কিংবা তার মেয়ের জন্য ভালোবাসা থাকবে না। থাকবে শুধু বাইরের একটা রূপ ব্যবহার করে উনার থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়া। প্রকৃতপক্ষে তার অন্তরে বিএনপি-জাতীয় পার্টি। মুখে মুখে তিনি আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক আরও বলেন, ডবলমুরিং থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় তিনটি টাইপ মেশিন চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন শামসুল হক চৌধুরী। ওই ঘটনায় ১৭ দিন হাজতবাসও করেন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে আওয়ামী লীগের মিটিং পণ্ড করার জন্য বোমা হামলা চালান দলবল নিয়ে। তখন আমাদের মোশাররফ ভাই আহত হন। বোমা হামলার পর আমাদের নেতা ইসহাক মিয়া মাইকে বলেছিলেন, “কে তুমি হামলাকারী? আমি তোমাকে ভালো করে চিনেছি। তোমার নামের প্রথম অক্ষর ‘শ’।”

দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, ৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে শামসুল হক আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাচ্ছেন বিধায় স্টেডিয়ামে গরু জবাই করেন। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই আর আমি বহু চেষ্টা করে তাকে যোগ দিতে দেইনি। এর সাক্ষী আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রটোকল অফিসার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আওয়ামী লীগের ৫০ বছর পূর্তিতে তার যোগদানের চেষ্টা আমরা রুখে দেই। পরে ঢাকার কিছু নীতিভ্রষ্ট ক্রীড়া সংগঠক টাকার বিনিময়ে তাকে আওয়ামী লীগে যোগদানের সুযোগ দেন। সৈয়দ সেলিম নবীর (বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী) কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে শেখ রাসেল ক্রীড়া সংসদে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ পান শামসুল হক। সেদিনও সেলিম নবী ইন্ডিয়া থেকে আমাকে ফোন করে বলল, তার টাকাটা আজ পর্যন্ত শামসুল হক দেননি। তাকে বলা হয়েছিল পরিচালক করা হবে। কদিন আগে পরিচালক পদ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সেলিম নবীর নাম নেই। তিনি এমপি বা হুইপ যদি না হতেন তাহলে একবাক্যে বলতাম, তার মতো একজন প্রতারক বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, এরপর শামসুল হক আবাহনীর সাইনবোর্ড ধারণ করলেন। আবাহনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একটা দুর্বলতা আছে, যেহেতু সংগঠনটি তার প্রিয় ভাই শেখ কামালের হাতে গড়া। শামসুল হক চৌধুরী চেয়েছিলেন আবাহনীকে হাতিয়ার করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো। এই আবাহনীকে তিনি পুরোপুরি কাজে লাগান, ষোল আনা উশুল করে নিলেন।

দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় নেত্রী, আমার বড়বোনকে অনুরোধ করব- দলে যারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শ বিশ্বাস করে না তাদের ছাঁটাই করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শিক সন্তান, সে পেটে পাথর বেঁধে উপোস থাকবে, কিন্তু চুরি করতে যাবে না।

হুইপপুত্র শারুনের সঙ্গে ফোনালাপ, যা বললেন দিদারুল আলম

তিনি বলেন, আবাহনী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের তিন সিগনেটরির একজন তিনি। তাকে বাদ দিয়ে সংগঠনের অর্থ নয়ছয় করার চেষ্টা হলে তিনি আবেদন করে ব্যাংক হিসাবটি বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি নিজেই হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী শারুনকে ফোন করে তার বাবার সঙ্গে জমি নিয়ে চলা বিরোধটি মিটিয়ে ফেলতে অনুরোধ করেন এবং দেখা করার জন্য সময় চান।

ফোনালাপের শুরুতে ব্যবহার ভালো করলেও শেষের দিকে আবাহনীর ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শারুন এবং একপর্যায়ে চড়-থাপ্পড়ের হুমকি ও রাস্তাঘাটে নগ্ন করে পেটানোসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

মূলত ওই ফোনালাপের জেরেই শামসুল হক চৌধুরী প্রসঙ্গে মুখ খুললেন দিদারুল আলম চৌধুরী। ফাঁস করে দিলেন তার সব কা কীর্তি।

শারুন-দিদারুল আলমের ফোনলাপের উল্লেখযোগ্য অংশ

দিদারুল : আমি দিদার বলতেছি, তোমার আঙ্কেল। তুমি কি ঢাকা, না চিটাগাং?
শারুন : আমি ঢাকা আঙ্কেল।
দিদারুল : শোনো, তোমার আব্বা যে পজিশনে গেছে, বুজছ? তুমি ছাড়া তোমার আব্বাকে কাউকে ডিল করতে দিবা না। আমি আল্লাহর রাস্তায় আছি, আমার কাছে ইগো নাই।
শারুন : সব ঠিক আছে। আপনি আঙ্কেল আবাহনীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করছেন কেন?
দিদারুল : আমার জায়গায় যখন খুঁটা মারছে…
শারুন : এগুলো কি টিকবে? আমি কালকে সালাম মুর্শেদী সাহেবকেও বলছি …কালকাতা হয়ে যাবে।
দিদারুল : হলে হবে…
শারুন : আপনি বয়সী একজন মানুষ, আমাকে ফোন দিবেন আপনি?
দিদারুল : শোনো শোনো, তোমার নাম্বারটা আমার কাছে ছিল না…আমি বলি…
শারুন : আমি তো আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি, আমার আব্বা করুক না করুক।
দিদারুল : আমি যেহেতু পোস্টে নাই, আমার জায়গায় অন্য একজন আছে, তার নাম তো যেতে হবে।
শারুন : কোনো লেনদেন না করার জন্য আপনি না কি চিঠি দিয়েছেন?
দিদারুল : না, না…
শারুন : কোনো দরকার আছে এগুলার?
দিদারুল : দরকার তো কোনোটা নাই, তোমার আব্বা…
শারুন : জায়গা নিয়ে কোনো কিছু হলে আমাকে ফোন দিতেন।
দিদারুল : আমি বলছি, মনসুর সাহেবের প্লটটা তোমার আব্বাকে নিয়ে ফেলতে বল, আমি বলছি। আমরা ভাগ করলে হবে না, জায়গার মালিক অরজিনালি ম্যাজিস্ট্রেটেরা…
শারুন : আমি চিটাগাং আসতেছি।
দিদারুল : আমরা মার্কেটের মতো করব।
শারুন : সব দিব, আব্বা আপনাকে খুব পছন্দ করে, দুইদিন পরপর…
দিদারুল : আমার ভাড়াটিয়াকে তোমার আব্বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বের হতে কেমনে বলে? আজকে মোহামেডানের লোকেরা আমাদের কেন ইনসাল্ট করবে? আমাদের…
শারুন : আপনারা তো ক্লাবের দুঃসময়ে কেউ থাকেন না, আমাদের পরিবারের টাকা খরচ করে সব করতে হয়।
দিদারুল : তোমার লিমিটেড কোম্পানি কনসেপ্টে বিশ্বাস করি না বলে সবসময় দূরে ছিলাম।
শারুন : আর আঙ্কেল, আপনি ওই চিঠিটা উইথড্র করে ফেলেন। ওইটা দরকার নাই।
দিদারুল : ওইটা ক্লাবের বিষয়। ওইটা আমি তোমার আব্বার সাথে বসে কথা বলব। ওকে?
শারুন : ওইগুলা ওইগুলা দরকার আছে শুধু শুধু?
দিদারুল : আশ্চর্য কথা এ না। আমার যে…
শারুন : ওইটা দিয়ে কিছু হবে না। এটা আপনার প্রতি আমাদের একটি ক্ষোভ থাকবে, এই আর কিছু না।
দিদারুল : না হইলে মনে করো আমার একটা আপত্তি থাকলে ভবিষ্যতে…
শারুন : ঠিক আছে, আপনার আপত্তি আপনি রাখেন। আমরা এইরকম কত আপত্তি দিতে পারি না বিভিন্ন জায়গায়!
দিদারুল : ঠিক আছে। তুমি রোববারে আসনি?
শারুন : আপত্তি কি এখানে আপনি একা দিতে পারেন? না কি আপত্তি তো আমরাও দিতে পারি। ঠিক আছে, আঙ্কেল।
দিদারুল : ক্লাবের ব্যাপারে তোমার আব্বার সাথে বসে কথা বলব।
শারুন : ক্লাবের ব্যাপারে কীসের কথা? ক্লাবের ব্যাপারে যা কথা হওয়ার হইছে আর কথা বলার দরকার নেই। আপনি আপনার ক্ষমতা দেখাইছেন তো! এখন আমাদেরটা আমরা দেখাব।
দিদারুল : ক্ষমতা-টমতা কিছু না।
শারুন : দেখাইছেন তো। আপনি ক্ষমতা দেখাচ্ছেন না?
দিদারুল : আমাদের সেইফের জন্য করতে হবে না?
শারুন : আমরা যদি ক্ষমতা দেখাই, আপনি কি এক পারসেন্টও টিকতে পারবেন?
দিদারুল : না না, আমি ১০০% টিকতে পারব। শোনো, আমি হইলাম শেখ মুজিবের আদর্শিক সন্তান।
শারুন : এগুলা এগুলা আঙ্কেল এইসব এইসব এইসব গালগোল অন্য জায়গায় কইরেন। আপনি আমার সাথে কইরেন না। আমি সম্মান করি, সম্মান নিয়ে থাইকেন।
দিদারুল : তোমার আব্বা তো জাতীয় পার্টি করে, এখন আওয়ামী লীগে আইসা…
শারুন : এগুলা শেখ হাসিনা বুঝবে। আপনার বোঝার দরকার নাই।
দিদারুল : আমি যেখানে…
শারুন : রাখেন মিয়া, ফালতু!
দিদারুল : ক্ষমতা আমি দেখাব না কে দেখাবে? আমরা তো শাহজাদা, সাগরেদ না। আমরা অরজিনাল মানুষ।
শারুন : আমি আপনাকে সম্মান দিয়ে কথা বলছি, গায়ে লাগতেছে না?
দিদারুল : আমি তোমাকে এইজন্যই ফোন দিই নাই। তুমি এক কাজ করো, রোববারে আইসা…
শারুন : রাস্তাঘাটে যখন প্যান্ট-শার্ট খুইলা দিমু, রাস্তাঘাটে তখন বুঝবেন।
দিদারুল : অ্যা…
শারুন : বেয়াদবি তো এখনো দেখেন নাই। আমি এতক্ষণ সম্মান করে কথা বলতেছি, আপনার গায়ে লাগতেছে না? আপনি উল্টাপাল্টা কথা বলতেছেন কীসের জন্য?
দিদারুল : উল্টাপাল্টা কী বললাম?
শারুন : অ্যা… জাতীয় পার্টি কঅ? আপনার দরকার কী এগুলা নিয়ে?
দিদারুল : আরে শোনো, তোমার বাবা বিএনপি-যুবদলে, এরপর জাতীয় পার্টি কইরা এখন…
শারুন : গালবাজি যেডে এডে গরিবি রাস্তাঘাটত চোয়ারাই গালর দাঁত বেয়াগগুন ফেলাই দিইয়ুম। বেয়াদব হডিয়ার!
(গালবাজি যেখানে-সেখানে করবি রাস্তাঘাটে চড় মেরে মুখের দাঁত সবগুলো ফেলে দেব। বেয়াদব কোথাকার!)
দিদারুল : এরপরে জাতীয় পার্টি গরি।
শারুন : এই মিয়া, তোরে রাস্তাত ধরি পিডিব মাইনস্যে। বেয়াদব! তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ দে? এই তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ দে? তোরে আঁই ফোন দিতো হয়লাম না? তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ুছ?
(এই মিয়া, তোকে রাস্তায় ধরে পেটাবে মানুষ। বেয়াদব! তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস? এই তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস? তোকে আমি ফোন দিতে বলেছিলাম? তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস?)
দিদারুল : আমি তো অর্জিনাল।
শারুন : তোরে আঁই ফোন দিতো হয়লাম না? তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ুছ?
(তোকে আমি ফোন দিতে বলেছিলাম? তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস?)
দিদারুল : এই দেখো না তোমার বেসিক যেটা…
শারুন : এই বেটা, আমাকে ফোন দিছস কীসের জন্য? উল্টাপাল্টা কথা বলছ কীসের জন্য? (উত্তেজিত)
দিদারুল : সেটা রাস্তার ছেলে…তোমার বাপে জন্ম দিছে তো, এটাই তো তোমাদের বেসিক।
শারুন : তুমি আমারে ফোন দিছ কেন? ফালতু কোথাকার।
দিদারুল : ফোন দিছি তোমারে…
শারুন : তোমারে এতক্ষণ সম্মান করে কথা বলছি না আপনারে..
দিদারুল : জাতীয় পার্টি বলাতে তুমি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলা কেন?
শারুন : সম্মান করে কথা বলি, গায়ে লাগে না?
দিদারুল : তোমার বাপেরে বিচ্ছু শামসু নাম দিছে জিয়াউর রহমান।
শারুন : আমার বাপে যেটা করবে করুক না। আমার বাবা হুইপ। তুমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেছ, কথা কম বলো।
দিদারুল : রাস্তাঘাটে তুঁই প্যান্ট খুলিবি দে ব্যাডা! (রাস্তাঘাটে তুই প্যান্ট খুলবি ব্যাটা!)
শারুন : অ্যা.. খুলে ফেলবে মানুষজন, আমি খুলব না, মানুষজন খুলবে জে…
দিদারুল : মানুষজনকে আসতে বলো না?
শারুন : প্যান্ট খুলে দিবে যে, এইসব গালবাজি করে করে…
দিদারুল : তোমার সামনে কে আসবে, বুজছ?
শারুন : গালবাজি জায়গায় জায়গায় আমার সাথে করিয়েন না, আমার আব্বার সাথে করছেন, আমার সাথে এইসব গালবাজি কইরেন না। আপনার এইসব গালবাজি শুনার জন্য প্রস্তুত না আমরা।
দিদারুল : আচ্ছা! তুমি সাংঘাতিক ছাড়ায়ে গেছ!
শারুন : আপনি লাইনে কথা না বলে বেলাইনে কথা বলছেন কীসের জন্য?
দিদারুল : আচ্ছা, ঠিক আছে। ওকে, আইচ্ছা।
শারুন : লাইনে কথা বইলেন।

পাঠকের মতামত: