ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় ৪জনকে হত্যা্: কেমন ছিল ওরা, কী বলছেন পাড়া প্রতিবেশী

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ::  পরিবার-পরিজনের সুখের আশায় একটু ভালো মত জীবন কাটানোর লক্ষ্য রোকেন বড়ুয়া এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কুয়েতে প্রবাসী। কে জানত- তার এ সোনার সুন্দর সংসারে এ দুরবস্থা নেমে আসবে। আজ তার সাজানো সংসারের হাল ধরার কেউ রইল না। সন্ধ্যায় বাড়িতে বাতি জ্বালানোরও কেউ আর নেই। এ মহাকষ্ট জানি না রোকেন কীভাবে সইবেন।
রোকেন বড়ুয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকায় ‘শান্তপ্রিয় ভদ্র পরিবার’ হিসেবেই পরিচিত ছিল জানিয়ে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম বলেন, ‘ভাইদের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো ছিল। কারও সঙ্গে তাদের ঝগড়া বা জটিলতা ছিল বলে আমরা শুনিনি। এ ঘটনায় এলাকার লোকজনও হতবাক।’
উখিয়ার শান্ত, সবুজ গ্রাম পূর্ব রত্না। এ গ্রামে প্রায় ২/৩ শ পরিবারের বসবাস। সকলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কোটবাজার-ভালুকিয়া সড়কের দুই পাশে গ্রামটিতে বড়ুয়াদের বসবাস। রাস্তার দক্ষিণে পূর্ব রত্না বৌদ্ধ বিহার আর বিহারের সামনে দুইশ’ গজের মধ্য কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়াদের বাড়ি। পাশে অপর দুই ভাইয়ের ঘর।
সম্পর্কে রোকেনের আপন চাচা সুমন্ত বড়ুয়া ড্রাইভার (৬৪)। তিনি বলেন, অনেকের স্বামী বিদেশে থাকে। অনেকের প্রবাসী স্ত্রীকে নিয়ে নানা কথা রটে। কিন্তু রোকেনের স্ত্রীকে নিয়ে এধরনের কোনো কথাবার্তা শোনা যায়নি। এমনকি রোকেনের বাড়ির সামনের দরজা প্রায় সময় বন্ধ
থাকতো। পিছনের দরজা দিয়ে রোকেনের স্ত্রী মিলা ও শাশুড়ি চলাফেরা করতেন।
পাশের গ্রামের আবদুল করিম বলেন, আমরা কোনদিন শুনিনি রোকেন ও তার স্ত্রী মিলার সাথে গ্রাম বা পাড়া প্রতিবেশীর কারো সাথে কোন ঝগড়া বা বিরোধের কথা। রামু উপজেলা থেকে রোকেন বড়ুয়া বিয়ে করলেও তার স্ত্রী খুবই ভদ্র, শালীন ও মার্জিত স্বভাবের মেয়ে। নেহায়েত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরেও বের হত না। তাদের সাথে কারো শত্রুতায় এ ঘটনা ঘটেছে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না।
প্রতিবেশী দুলাল বড়ুয়া জানান, গত ২/৩ দিন আগে মিলাদের ভিটার দুটো গাছ কাটা হয়। ভিন্ন এলাকার কয়েকজন লোক গাছ দুটো কাটে। তারা মিলাদের বাড়িতেও আসা যাওয়া করেছে। তিনি জানান, তারাও সন্দেহের বাইরে নয়। হিমু বড়ুয়া বলেন, মিলা বেশ সুন্দরী ও যুবতী। হয়ত বখাটে-দুর্বত্তরা তার ওপর কুনজর দিয়েছিল। আর তারই জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হতে পারে। তাছাড়া খুনিদের মধ্যে হয়ত এমন কেউ ছিল যাকে বা যাদের ঘরের শিশু ও বৃদ্ধারা চিনে ফেলেছিল। না হয় অবুঝ শিশুদের ও বৃদ্ধাকে কেন খুন করা হল।
প্রতিবেশী ভুট্টো বড়ুয়া ও প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই রবিসন বড়ুয়া বলেন, তারা দু’জনেই রাত দুটোর দিকে দোকানে টিভি দেখে বাড়ি ফিরেন। রাত ১২ টার দিকে তিনজন লোক মোটর সাইকেল নিয়ে উচ্চস্বরে চেচামেচি করে কয়েক বার রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এলাকাবাসীর কৌতুহল পরিবারটি নির্ঝঞ্ঝাট তবে কেন এ হত্যাকাণ্ড।

পাঠকের মতামত: