ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতে সৃজিত হয়েছে দৃষ্টি নন্দন ঝাউবাগান, সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষা পাবে হাজারো কোটি টাকার সম্পদ

জাকের উল্লাহ চকোরী, নিজস্ব প্রতিবেদক ::

দেশের পর্যটন রাজধানী বিশ্বের দীর্ঘতম বেলাভূমি সমুদ্র সৈকতে দৃষ্টি নন্দন ঝাউবাগান সৃজন করা হচ্ছে। এতে সমুদ্রের প্রবল ঢেউ থেকে রক্ষা পাবে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠা  স্থাপনাসহ হাজারো কোটি টাকার সম্পদ ।

এ বাগান সৃজন করা হচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে আসলে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে সৈকতে ঝাউবাগান সৃজনের নির্দেশ দেয়। এসময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকায় ৫৮৫ হেক্টর ঝাউবাগান সৃজন করা হয়।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস তথা প্রকৃতিক দূর্যোগের কারণে ২৭৪ হেক্টর ঝাউবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঝাউবাগান একদিকে পর্যটকদের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও সমুদ্র সৈকতকে ভাঙ্গন হতে রক্ষা ও সৈকতের সৌন্দর্য্য বর্ধন করে।

এ লক্ষ্যে সৈকত এলাকায় পরবর্তীতে আবার নতুন করে ঝাউবাগান সৃজনের উদ্যোগ নেয় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় “টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওয়াতায় আগামী ৫ বছরে আরো ৪০০ হেক্টর এলাকায় এবং প্রস্তাবিত “কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টেনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও ইকো-টুরিজম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে আরো ১৪০ হেক্টর ঝাউবাগান সৃজন ও পুরাতন ঝাউবাগানের খালি স্থানে ৮০ হাজার ঝাউ চারা রোপনের মাধ্যমে শূণ্যস্থান পুরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন সার্কেলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার ও কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির ইনকিলাবের এ প্রতিনিধিকে জানান, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২১লাখ টাকা,২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা ও চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৪লাখ ৫০ হাজার টাকা নতুন ভাবে ঝাউবাগান সৃজনের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রানালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, কবিতার চর, ডায়বেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট ও নাজিরের টেকসহ বিভিন্ন স্থানে এ সমুদ্রের অব্যহত ভাঙ্গনের কারণে ঝাউবন সমুদ্র গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন অব্যহত থাকায় কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম, হোটেল শৈবাল, ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসা, বিয়াম ফাউন্ডেশন, বিমান বাহিনীর ঘাটি, ডায়েবেটিস হাসপাতাল, আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অদুর ভবিষ্যতে সমুদ্র গর্ভে বিলিন হওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। এতে সরকারী-বেসরকারী হাজার কোটি টাকার সম্পদ চরম হুমকির সম্মূখিন হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বিভিন্নস্থানে কতিপয় দূস্কৃতিকারী কর্তৃক অবৈধ ভাবে ঝাউগাছ কর্তনের ফলে ঝাউগাছের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে কক্সবাজার রেঞ্জের হিমছড়ি টহল ফাঁড়ির বিটের অধিনে হিমছড়ি ব্লকের আমতলী ছড়া হতে হেফজখানা পর্যন্ত ২০ হেক্টর এলাকায় ৫০ হাজার চারা, ইনানী রেঞ্জের সোয়ান খালী বিটের অধিনে- সোয়ান খালী খাল হতে রূপপ্রতি খাল পর্যন্ত ৪০ হেক্টর এলাকায় ১লাখ চারা, কক্সবাজার রেঞ্জের হিমছড়ি টহল ফাঁড়ির অধিনে হিমছড়ি ব্লকের হেফজখানা হতে রেজু ব্রিজ পর্যন্ত ২০ হেক্টর এলাকায় ৫০ হাজার ও কক্সবাজার রেঞ্জের কস্তুরা ঘাট বিটের অধিনে নাজিরের টেক হতে বাগান পাড়া পর্যন্ত সর্বমোট ১০০ হেক্টর জমিতে ২লাখ ৫০ হাজার ঝাউ চারা রোপনের কার্যক্রম চলছে।

এসব চারা সযত্বে বেড়ে উঠলে একদিকে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন বেড়ে যাবে। সব চেয়ে উপকৃত হবে মানবঢাল হিসেবে চিহিৃত ঝাউবাগান রক্ষা করবে সৈকত ঘেষে গড়ে উঠা সরকারী-বেসরকারী হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদ। ##

পাঠকের মতামত: