ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের এনআইডি প্রদান: নির্বাচন অফিসের কর্মচারীসহ তিনজন আটক, চুরি হওয়া ল্যাপটপ উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক ::  নগরীতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের এক কর্মচারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। একই সাথে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এনআইডি তৈরি ও ডাটা এন্ট্রি কাজে ব্যবহৃত নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপ। গতকাল রাত ১১টা নাগাদ তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন।
উল্লেখ্য, গতকাল গণমাধ্যমে ‘রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার নেপথ্যে সিন্ডিকেট’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। আটককৃতদের মধ্যে এনআইডি জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ডবলমুরিং থানার অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীনকে (৩৫)। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আটক আরও দুজনের মধ্যে রয়েছেন পটিয়া উপজেলার মৃত হারাধন দাসের ছেলে বিজয় দাস (২৬) ও তার বোন সীমা দাস। সীমা দাস ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম হয় সুমাইয়া আক্তার (২৪)। এর মধ্যে বিজয় দাস পেশায় গাড়িচালক। আর সুমাইয়া চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে আয়া পদে কর্মরত রয়েছেন।
গতকাল রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রক্রিয়াধীন ছিল। কোতোয়ালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামানের নেৃতত্বে একটি টিম তখন জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।
এনআইডি জালিয়াতি চক্রের এই তিনজনকে আটকের পর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গত মাসে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে আসা লাকি আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারীকে আটক করেছিলাম। এ ঘটনার পর ইসির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আমরা তথ্য পাই, আমাদের অফিসের কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছে। এরপর অনুসন্ধান ও অভিযান চালিয়ে গত তিন দিনে কঙবাজার থেকে প্রথমে একজন ও পরে পাঁচজনসহ মোট ছয় জনকে আটক করি।
হাসানুজ্জামান বলেন, ওই ছয় জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় আমরা ডবলমুরিং থানার অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার হেফাজতে নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্স করা একটি ল্যাপটপ ছিল। সেটি কোথায় আছে জানতে চাইলে প্রথমে সেকোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তিনি জানান, ল্যাপটপটি তার বন্ধু বিজয় দাসের কাছে আছে। তার মাধ্যমে আমরা বিজয় দাসকে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে হাজির করি। বিজয় দাস জানান, ল্যাপটপটি তার বোন সীমা দাস ওরফে সুমাইয়া আক্তারের কাছে রয়েছে। পরে তার মাধ্যমে সুমাইয়াকে ল্যাপটপটি অফিসে আনতে বলা হয়। সুমাইয়া নির্বাচন অফিসে আসলে তাকে আটক করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন জানান, ২০১৪ সাল থেকে ল্যাপটপটি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এটির মাধ্যমে ওয়েবক্যাম দিয়ে ভোটারের ছবি তোলা থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করা যায়। এই ল্যাপটপের মাধ্যমে ভোটারের তথ্য জাতীয় তথ্য ভান্ডারে এন্ট্রি করা যায়। ওই ল্যাপটপটি ব্যবহার করে আটককৃতরা জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া থেকে শুরু করে তাদের এনআইডি তৈরি ও জাতীয় তথ্য ভান্ডারে ভোটারের তথ্য এন্ট্রি করেছেন।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সাথে ওই তিনজনের পাশাপাশি চক্রটির আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে তাদের তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় জয়নালকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বাকি দুজনকে আমরা আটক করে নিয়ে যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জালিয়াতির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানান কামরুজ্জামান।

পাঠকের মতামত: