ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি’

নিউজ ডেস্ক ::  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেছেন, আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্য যেকোনও দলের তুলনায় মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাদের বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, তবে জনগণের মধ্যে নাগরিক বোধ সৃষ্টিতে দলটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি। আমরা কথা বললেই তো রাজার সঙ্গে শত্রুতা হয়ে যায়।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘যাত্রী অধিকার দিবস ঘোষণা ও আলোচনা সভা’য় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নিজের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জানা গেছে, যাত্রী অধিকার দিবসের ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

সভায় সুলতানা কামাল বলেন, নারীরা সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নারীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন কে নেবে? আমরা সবাই কিন্তু অন্যের ওপর দায়িত্বটা দিয়ে দিচ্ছি। যেন নিজের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমি যে অবস্থানে আছি, সেই জায়গা থেকে কী দায়িত্ব পালন করছি? দায়িত্ব এড়ানোর একটা ব্যাপার হলো সুশাসনের অভাব।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খাঁন বাদলকে দেখিয়ে সুলতানা কামাল আরো বলেন, উনারা আমাদেরকে কিছু বলতে বলেন। অথচ উনারা সংসদ সদস্য। জনগণের কথা উনাদেরই বলার কথা। আমরাই যদি বলতে থাকি, তাহলে সংসদ আছে কীসের জন্য? সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে বাদল ভাইদের পারমিশন দেয়া হয়েছে। আমাদের তো কোনো পারমিশনই দেয়া হয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে তোমরা কারা? আমরাই (সরকার) সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি, যা খুশি তাই করব। তোমরা কারা? আমরা কথা বললেই তো রাজার সঙ্গে শত্রুতা হয়ে যায়। সত্য কথা বলার কারণেই মিথ্যা মামলায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে জেলে যেতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের অনেকে বলেন, দেশ সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের মতো উন্নত হয়ে গেছে। এ কথা শুনে গর্ববোধ করি। কিন্তু হংকং-সিঙ্গাপুরের পরিবহণ ব্যবস্থা তো অনেক উন্নত। আমাদের দেশের সড়কগুলো এত অনিরাপদ কেন? রাস্তা ভালো না, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ খায়; আরো অনেক সমস্যার কথা বলতে শুনি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এগুলোর কারণে যাত্রীরা কেন ভোগান্তির শিকার হবে? কাজের জন্য প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এখন গাড়িতে উঠে আমরা বসার জায়গা পাব কিনা সেটা নিয়ে ভাবি না, ভাবি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কিনা! মেয়েরা ভাবে সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব তো!

সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খাঁন বাদল বলেন, ভিআইপিরাই সবচেয়ে বেশি নিয়ম লঙ্ঘন করেন। তারা ক্ষমতার দম্ভ দেখান। যাদের ওপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আরো বেশি আইন লঙ্ঘন করেন। ঢাকা সিটির ফুটপাত ঠিক করে মানুষের হাঁটার উপযোগী করা জরুরি। ফুটপাত ঠিক না হওয়ার প্রধান কারণ, এখান থেকে কোনো টাকা ইনকামের রাস্তা নেই।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাকে মিথ্যা চাদাঁবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর দেশের সচেতন মহল, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যম যেভাবে প্রতিবাদ করেছে এতে আমি অভিভূত। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই আন্দোলনে আমার উৎসাহ আরো বহুগুণ বেড়েছে। যত বাধা-বিপত্তি আসুক যতদিন দেশে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, সড়ক নিরাপত্তা তথা যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রী অধিকার আন্দোলন চালিয়ে যাব।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সড়কে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। অথচ নিকটাত্মীয় কেউ মারা না গেলে এটা কোনো বিষয়ই না। আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা পড়ছি। এটা নিছক একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। অথচ জনগণ কী সেবা পেল, তা বলা হচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: