ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাল মহেশখালীতে ইউপি নির্বাচন, সর্বত্র অজানা শংকা

1458046608_57035_1-1পারভিন আকতার, নিজস্ব প্রতিনিধি :::

কাল ২২ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকেই শুরু হবে মহেশখালীর ৬ ইউপিতে নির্বাচন । এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেলেও এক অজানা আতংকের মধ্যে রয়েছে সাধারণ ভোটাররা। এ নির্বাচন আদৌও শান্তিপূর্ণ হবে কিনা ভোটারদের সন্দেহ প্রকাশ করে সবর্ত্র বিরাজ করছে অজানা শংকা। নাকি চকরিয়া-মহেশখালী পৌর নির্বাচনে স্টাইলে হবে এমনটা ধারনা করতে শুরু করেছেন সাধারণ ভোটারা। মঙ্গলবারের এ নির্বাচন সুষ্ট ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা ও আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি বাবুল চন্দ্র বণিক।
আজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। ওই দিন থেকে হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, কুতুবজোম, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটসহ ৬ ইউপিতে ২৯ টি ভোট কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করে র‌্যাব-বিজিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকটাক থাকলে মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ হবে। উপজেলার ৬ ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে একনাগাড়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে ভোটারদের মাঝেও চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। তারা হিসাব কষছেন কাকে ভোট দিলে আগামী পাঁচটি বছর সুখে থাকবেন। হবে এলাকায় উন্নয়ন। উন্নত হবে সাধারণ মানুষের জীবন। দুর হবে সন্ত্রাস,এই সব নির্বাচনী নানা বিষয় নিয়ে পুরো উপজেলা জুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। একই সাথে কে হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের কান্ডারী? সেই আলোচনাও একেবারে তুঙ্গে। সাধারণ ভোটারদের চোখে মহেশখালীর ছয় ইউনিয়নে ভোটের হিসেবে কারা এগিয়ে আছেন- সে হিসাব নিয়ে সিটিএন ২৪ ডট কমের স্টাপ রিপোর্টার হোবাইব সজীবের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
জানা গেছে, মহেশখালীর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ইউনিয়ন কালারমারছড়া। নির্বাচন ছাড়াও নানা কারণে ইউনিয়ন সব সময় আলোচনায় থাকে। আজকের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালারমছড়া নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। নৌকা প্রতীক নিয়ে সেলিম চৌধুরী ও তারেক বিন ওসমান শরীফের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নির্বাচন স্থগিতের গুজব মুখে হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ১ দিন আগে হাইকোর্টের নির্দেশে ২২ মার্চই কালারমারছড়ার নির্বাচন স্থগিত হয়েছে ১ মাসের জন্য। এখানে ধানের শীষ প্রার্থী ছিলেন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিকবিদ ক্লিন ইমেজের লোক আলহাজ্ব এখলাছুর রহমান।
মহেশখালীর একদম উত্তর প্রান্তে অবস্থিত উপ-দ্বীপ মাতারবাড়ি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী পাঁচজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুল, বিএনপির প্রার্থী নাসের উদ্দীন মো: বাবর চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ, আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. মোস্তাক আহমদ, কাউসার সিকদার। বেশ কিছু ভোটার সাথে কথা বলা জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও মাতারবাড়িতে ভোটের হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী নাসের উদ্দীন মো: বাবর চৌধুরী।
স্থানীয় প্রবাসী বিএনপির নেতা উছমান জানান, আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থী বেশি হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোটগুলো ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু বিএনপির একটা ভোটও বাইরে যাবে না। তার সাথে যোগ হবে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট। বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও নানা কারণে তিনি মাষ্টার মো: উল্লাহ থেকে পিছিয়ে আছেন। তবে ভোট কারচুপি না হলে মাষ্টার মো: উল্লাহ ইউনিয়ন পিতার আসনে বসবেন বলে এমনটা আওয়াজ উঠেছে মাতারবাড়ী ভোটারদের মধ্যে। মুল লড়াই হবে বাবর চৌধুরী ও মো উল্লাহ’র মধ্যে। মহেশখালীর একমাত্র উপকূলীয় ইউনিয়ন ধলঘাটা। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোক্তার আহমদের পুত্র কামরুল হাসান, বিএনপি মনোনিত প্রার্থী সরওয়ার আলম শাহীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আলম পুতু। সেখানে ভোটের রাজনীতিতে অন্য দু’জনের সমান এগিয়ে আছেন কামরুল হাসান।
মহেশখালী আরেক আলোচিত ইউনিয়ন হোয়ানক । এই নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী মোস্তফা কামাল, বিএনপির মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল করিম চৌধুরী, বিএনপির বিদ্রোহী মাহবুবুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান। এদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন এনামুল করিম ও মোস্তফা কামাল। হোয়ানক ইউনিয়নে এই দু’প্রার্থীর পক্ষে সমান গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দু’প্রার্থীই সমান এগিয়ে আছেন। বড় মহেশখালীতে প্রার্থী সংখ্যা চারজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদের ভাতিজা এনায়েত উল্লাহ বাবুল, আকতার কামাল ও আমান উল্লাহ। তবে মাঠে নেই আকতার কামাল ও আমান উল্লাহ। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে শরীফ বাদশা ও এনায়েত উল্লাহ বাবুলের মধ্যে। তারা গতবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। সেবার অল্প ভোটে হেরেছিলেন এনায়েত উল্লাহ বাবুল।
স্থানীয় ভোটার যুবদল নেতা ছাবের জানান, গতবারে হারলেও এবার শরীফ বাদশাকে হারিয়ে দিতে পারেন এনায়েত উল্লাহ বাবুল। নানা কারণে এবার বাবুলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেন এই ভোটার।
উপজেলা সদরের সাথে লাগোয়া এই ইউনিয়ন কুতুবজোম। সেখানে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দু’জন প্রার্থী সরাসরি নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা শফিউল আলম। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমদ সওদাগরের পুত্র তরুণ সমাজ সেবক মোশররফ হোসেন খোকন। এই ইউনিয়নেও দু’প্রার্থীকে প্রায় সমানে সমান মনে করা হলেও ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে আছেন মোশারফ হোসেন খোকন তিনি নির্বাচিত হবে বলে অনেকের ধারনা। ছোট মহেশখালী প্রার্থী সংখ্যা পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী সাবেক বৃহত্তর গোরকঘাটার চেয়ারম্যান মো: আলীর পুত্র জিহাদ বিন আলী, বিএনপির প্রার্থী নূরুল হুদা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, বিএনপির বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা ও জাপার প্রার্থী সিরাজুল মোস্তফা বাঁশি।
মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার উপজেলা নির্বাচন সমন্বয়কারী মো: আবুল কামাল জানান, সবকটি কেন্দ্রের মধ্যে ২৯ কেন্দ্র ( ঝুঁকিপূণ) হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাবের টিম দায়িত্ব পালন করবে। সুষ্ঠভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা মোবাইল টিমের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করবেন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ভোট গ্রহণ কালে যে কোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: