ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেপরোয়া বাইকে ভয়ঙ্কর রাজপথ

১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি নয় ।

নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্রগ্রাম ::  অদক্ষ আর বেপরোয়া মোটরবাইক চালকদের কারণে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের রাজপথ। প্রতিদিন রাস্তায় নামছে নতুন মোটরবাইক। একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইক চালাতে গিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে এবং দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবেও কাজ করছে। নগরীর রাস্তাগুলোতে যানজট তৈরিতেও রাখছে ভূমিকা। বাইকের কারণে কমে যাচ্ছে অন্যসব যানের গতিও। বিশেষ করে সিগন্যাল উপেক্ষা করে ছোটে শত শত মোটরবাইকার। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং চালক ও এর আরোহী মারাও গেছে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে সংগৃহীত তথ্যমতে, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় মোটরসাইকেল সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মোটর বাইকার নিহত হয়েছে ১৮ জন। আরোহী ৫ জন। আর মোটরবাইকের ধাক্কায় মারা গেছেন ৬ জন।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও বলছে, সামপ্রতিক সময়ে মোটরবাইকের সংখ্যা বেড়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মোটরবাইকের কারণে রাস্তা এখন ঝুঁকির মুখে। মোটরবাইকের এ দৌরাত্ম্য রোধে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ জানিয়েছে অন্তত শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে কেউ আর মোটরসাইকেল কিনতে পারবে না। সড়কের নিরাপত্তায় মোটরসাইকেল বিক্রির সময় ক্রেতার ন্যূনতম শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তা বিক্রেতাকে নিশ্চিত করতে হবে।
গত কয়েক দিনে নিউমার্কেট মোড়, জিইসির মোড়, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি, গোলপাহাড় মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ সড়ক, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, আগ্রাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব সিগন্যালে মোটরবাইকাররা ওঁৎপেতে থাকে ক্রসিং অতিক্রম করার জন্য। তারা কোনোরকম ট্রাফিক সিগন্যাল মানে না। সুযোগ পেলেই দ্রুত সিগন্যাল ডিঙিয়ে ছোটে। আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সড়কজুড়ে বাইকাররা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাইক চালায়। এতে চলমান গাড়িগুলোর চালকরা হকচকিয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই রাস্তায় বাইকারদের সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ি থেকে শুরু করে অন্যান্য যানবাহনের চালকদের বচসায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। বাইকারদের কারণে চট্টগ্রামের রাস্তায় হুটহাট গাড়ি ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহনগুলো। বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে বিরাট খেসারত দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক বন্দর) তারেক আহমেদ আজাদীকে বলেন, ট্রাফিকশৃক্সখলা ফেরাতে এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটা সার্বিক অ্যাপ্রোচ আছে। এটি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেও। তবে সমপ্রতি শহরে মোটরসাইকেলের আধিক্য বেড়েছে এবং তারা অনেক সময় সিগন্যাল লক্সঘন করে তড়িঘড়ি পার হতে চায়। এখন মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করাটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণপরিবহনের অপ্রতুলতা ও যানজট এড়িয়ে চলতে গত কয়েক বছর থেকেই মোটরসাইকেলে ঝুঁকছেন নিত্য যাত্রীরা। প্রতিদিন দেশে এখন গড়ে ১,০৩৫টি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হচ্ছে। তবে যারা এসব মোটরসাইকেল চালাচ্ছে তাদের একটি বড় অংশেরই লাইসেন্স নেই। মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে যখন অন্য সব গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে তখনও দেখা যায় ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা দিব্যি বেরিয়ে যান। এ ধরনের বেপরোয়া চালকদের সিগনালে থামিয়ে রাখতে অনেক জায়গায় বাধ্য হয়ে দড়ি দিয়ে রাস্তা আটকাতেও দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে। তবে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়াতে পুলিশের বিশেষ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে মোটরসাইকেল চালকদের আইন মানতে কড়াকড়ি দেখা গেছে। পুলিশের নির্দেশনায় হেলমেটবিহীন চালকদের অনেক ফিলিং স্টেশনেই তেল দেওয়া হচ্ছে না।
নগরীর পতেঙ্গা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মশিউর রহমান আজাদীকে বলেছেন, ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা। এদের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন কাজ। তবু আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি এবং এর ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে। এখন ৯৫ শতাংশের বেশি চালক ও পেছনের যাত্রী হেলমেট পরছেন।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের অধিকাংশেরই চালক অনভিজ্ঞ এবং লাইসেন্সবিহীন। নিয়ম না জেনে ইচ্ছে মতো বেপরোয়াভাবে চালান অনেকে। চালানোর সময় আবার অনেক ড্রাইভারের কানে দেখা যায় মোবাইল। ইতোমধ্যেই বিআরটিএর পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে যে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নূন্যতম শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিরেকে কোনো ক্রেতার নামে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। মোটরসাইকেলের ক্রেতা কোনো প্রতিষ্ঠান হলে ওই প্রতিষ্ঠানের যিনি ব্যবহারকারী, তার নামে বরাদ্দপত্র এবং শিক্ষানবিশ লাইসেন্স থাকতে হবে। কেবল তখনই ওই কোম্পানির কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি বা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

পাঠকের মতামত: