ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

মাতামুহুরীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে লামার মেরাখোলা গ্রাম, হুমকির মুখে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

লামা প্রতিনিধি ::  মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে লামা উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রাম। এ নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটে হারিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বতর্মানেও শতাধিক ঘরবাড়ি, কবরস্থান ও শত একর ফসলি জমি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

সূত্র জানায়, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামের তিন পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী নদী। শুষ্ক মৌসুমের মরা নদী, বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভরে যায়। নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় এ নদীর ভাঙন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সাল থেকেই নদীর ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে সামান্য আকারে থাকলেও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে তা তীব্র আকার ধারন করেছে। গত ১ যুগে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি, ২০ একরের অধিক ফসলি জমি, রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর কিছু কিছু বসত ভিটে হারিয়ে নিজেরা অন্য স্থানে জমি কিনে কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদী নদী ভাঙনের ফলে তারা তিলে তিলে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ নদী ভাঙনের শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

মেরাখোলা গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মেরাখোলা গ্রামের সড়কের পূর্ব পাশের বেশির ভাগ অংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অংশের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি এখন আর নেই। অবশিষ্ট দু’চারটি পরিবার রয়েছে। ভাঙনের মুখে তারাও অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছে। এছাড়া গ্রামের পশ্চিম পাশে অবস্থিত একমাত্র কবরস্থানের বেশির ভাগ অংশই ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ হুমকির মুখে রয়েছে। কবরস্থানের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশ দিয়ে নদী ভাঙছে। এসময় জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্তরা আক্ষেপ করে বলেন, গত কয়েক বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙনে আমরা সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সহযোগিতা দূরের কথা কোনো খোঁজ খবরও নেয়া হয়নি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে গ্রামের তিন দিকে এক সাথে ভাঙন শুরু হয়।

নদী ভাঙনে মেরাখোলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আবদুর রশিদ জানান, মাত্র দু’দিন আগে তার বসত ঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসময় পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকম জানে রক্ষা পান। তার কৃষি জমিসহ মূল্যবান স্থাপনাও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২৫০ শতক জায়গা জুড়ে তার বাড়ি ছিল, এখন সেটি ৫ শতকে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তামাক প্রক্রিয়াজাত করার জন্য নির্মিত একটি তামাক চুল্লিতেই নিরুপায় হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

মেরাখোলা গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক জানান, মাতামুহুরীর ভাঙনে ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব পরিবারের লোকজন তাদের ভিটে-মাটি হারিয়ে এখন দিশেহারা। ইতিমধ্যে একমাত্র কবরস্থানটির একাংশ নদীতে ধসে পড়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে, যে কোন সময় এলাকার একমাত্র কবরস্থানসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে মেরাখোলা গ্রামটি ছোট হয়ে এ গ্রামের মানচিত্র বদলে গেছে। এখনি কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো গ্রাম এক সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোতে আবারো নদী ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করা হবে।

পাঠকের মতামত: