ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিকশায় বাড়তি ভাড়া

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চালকের কথা কাটাকাটি নিত্যদিনের ঘটনা

চবি প্রতিনিধি ::

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা মানছেন না। দিনের পর দিন তাঁরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। ক্যাম্পাসের বেশ কিছু স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়াও আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এখানকার ক্যাম্পাসে ভাড়া বেশি বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, আগে ক্যাম্পাসে রিকশাভাড়ার দৃশ্যমান কোনো তালিকা ছিল না। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণ করে একটি তালিকা করে দেয়। কিন্তু এই তালিকা চালকরা মানছেন না। এমনকি শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তালিকার কথা বলায় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টের মূল্য তালিকার ব্যাানারটিও সরিয়ে ফেলে। পরে প্রশাসন আবার জিরো পয়েন্টে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকার ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। এতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি রিকশায় ভাড়ার তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখনো কোনো রিকশায় ওই তালিকা দেখা যায়নি।

ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে দেওয়া ভাড়ার তালিকা অনুসারে, এখান থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও প্রশাসনিক ভবন, আলাওল ও এ এফ রহমান হল যেতে ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রীতিলতা, শামসুন্নাহার, খালেদা জিয়া ও শহীদ আবদুর রব হলে যেতে তালিকায় ১৫ টাকা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ২০ টাকা। পুরাতন শামসুন্নাহার হল, প্রকৌশল দপ্তর ও মেডিক্যাল সেন্টারে ২০ টাকা তালিকায় থাকলেও আদায় হচ্ছে ৩০ টাকা।

অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট বাজার থেকে ব্যবসা প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, অগ্রণী ব্যাংক, শহীদ মিনার, রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত ভাড়া ১৫ টাকা; রিকশাচালকরা নিচ্ছেন ২৫ টাকা। কলা, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি, প্রক্টর অফিস, চাকসু ও শহীদ আবদুর রব হলে যেতে ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে আদায় করা হয়। সামুদ্রিক বিজ্ঞান অনুষদ ও ফরেস্ট্রি ভবনের ভাড়া ২৫ টাকা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩৫ করে নিচ্ছেন চালকরা। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার ভবন, চাকসু ও কলা ভবনের পশ্চিম গেটে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকাও মানা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সবাই প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বেশির ভাগ চালক মানছেন না। তাই তাঁরাও মানছেন না।

অন্যদিকে শরিফ মিয়া নামের একজন চালক জানান, কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বর্তমান দ্রব্যসামগ্রীর বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল নেই। তাই তাঁরা এ তালিকা মানতে পারছেন না।

বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা জানান, রিকশাচালকরা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তালিকা না মেনে কৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা বেশি ভাড়া চান। অনেক শিক্ষার্থী তর্কে না জড়িয়ে ভাড়া দিয়ে দেন। আবার অনেকের তর্কের কারণে নির্ধারিত ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নিতে পারেন না।

তাঁদের মতে, এখানে রাস্তা ভালো, কোনো জ্যাম নেই। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ভাড়ার তালিকা সবকিছু বিবেচনা করেই মানসম্মতভাবে নির্ধারিত করা হয়েছে।

শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়ার তালিকা অমান্য করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে তর্ক করলে স্থানীয় বলে চালকরা প্রভাব খাটান। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের ক্যাম্পাসে রিকশাভাড়া অনেক বেশি। তাই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি বলে মনে করছি।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো আবার ভাড়ার তালিকা দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া ভাড়ার তালিকা মানতে হবে। যদি না মানার নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসে: আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলাপ করা হবে।’

এদিকে, ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে নির্ধারিত তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এক রিকশাচালককে মারধর করেন এক শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে ক্যামপাসে আধাঘণ্টা ধর্মঘট করেন রিকশাচালকরা। পরে প্রক্টর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

চালকরা বলেন, আগের মেয়াদের প্রক্টর একবার ওই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের জন্য বলেন। আমরা আমাদের দাবি জানালে তিনি আমাদের ভাড়া বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। দুই-তিন স্থানে আমরা বেশি ভাড়া চেয়ে আসছি। কিন্তু এটা নিয়ে মারধরের মতো ঘটনা তো ঘটতে পারে না।

পাঠকের মতামত: