ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কুকুরের মুখে মানব সন্তান! “রাস্তার পাগলী মা হয়, বাবা হয় না কেউ”

:: এম.আর মাহমুদ ::

রাস্তার পাগলী মা হয়, বাবা হয় না কেউ! উক্তিটি প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের ছিদ্দিকীর। তিনি দেশের বর্তমান বাস্তব চিত্র দেখে এমন উক্তিটি করেছেন বলে মনে হয়। উক্তিটি পড়ে চিন্তা করেছিলাম, তিনি কেন এমন মন্তব্যটি করলেন? উক্তিটির যথার্থতা খুঁজে পেয়েছি গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগরীর অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টারের নিকটবর্তী বাদামতল রাস্তায়। রাস্তায় বেশ ক’টি কুকুর সদ্য প্রসব করা একটি মানব সন্তান নিয়ে টানা হেঁচড়া করছিল। এ সময় সিএমপি’র ডবল মুরিং থানার একদল পুলিশ রাত্রীকালীন টহল শেষ করে সকালে থানায় ফিরে যাওয়ার জন্য গাড়ীর অপেক্ষা করছিল। এমন সময় পুলিশের নজরে দৃশ্যটি ধরা পড়লে, উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান কুকুরের কবল থেকে একজন মহিলার সহায়তায় সদ্য প্রসব করা সন্তানটি উদ্ধার করে। পরে ওই উপপরিদর্শক মানব সন্তানটি বাঁচানোর জন্য চট্টগ্রামস্থ মা-শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্য ডাক্তার শিশুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তার প্রাথমিক দায়িত্ব শেষ করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ রয়েছে। ওই উপপরিদর্শকের ভাষ্য মতে কুকুরের কবল থেকে শিশু কন্যাটি উদ্ধার করে হাসপাতালে যাওয়ার পথে সামান্য দূরে ২৫/২৬ বছর বয়স্ক মানসিক ভারসাম্যহীন রক্ষাক্ত এক মহিলাকে দেখতে পায়। ওই মহিলার কাছে নাম পরিচয় জানতে চাইলেও সে কোন উত্তর দিতে পারেনি। উপপরিদর্শক ধারণা করছেন, শিশু সন্তানটি ওই পাগলী মায়ের। পুলিশ ওই মহিলাটিকেও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন। হয়তো একজন মহানুভব পুলিশের হাতে পড়ায় শিশুটি প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে শিশুটি কারো না কারো আশ্রয়ে লালিত পালিত হবে। কিন্তু বঙ্গবীর কাদের ছিদ্দিকীর সেই উক্তিটি বার বার হৃদয়ে রেখাপাত করছে একটি কারণে ‘রাস্তার পাগলী মা হয়েছে, কিন্তু বাবা তো কেউ হয়নি!’। সভ্যতার যুগে কোন না কোন লম্পটের হাতে রাস্তার পাগলী ধর্ষিত হয়েছে। কিন্তু হয়েছে সে কাউকে চিনে না বলে থানা বা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি। হয়তো কোনদিন করবেও না। অথচ এ সভ্য সমাজে অসভ্য বদমাশরা এভাবে অপকর্ম করেও বীরদর্পে বিচরণ করে যাবে। যে দেশে রাস্তার পাগলী লম্পটদের যৌন লালশা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। সেখানে শিশু, ছাত্রী, বিধবা, প্রবাসীর স্ত্রী, যুবতী কেউকি রক্ষা পাচ্ছে? আমরা আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগের ইতিহাস পড়েছি। সে সময় কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়ার নজীর রয়েছে। আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূলদের আগমনের পরে সে যুগ অবসান হয়েছে। অথচ বর্তমানে আমরা সভ্য হিসেবে দাবী করলেও আবার সে বর্বর যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। যে দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এছাড়া পুলিশ, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ভন্ড পীর, ডাক্তারসহ বখাটে সমাজের মাতবর, জনপ্রতিনিধিদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের অনেকেই বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে, আবার কেউ কেউ পার পেয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কুকুরের মুখ থেকে পাগলী মায়ের সন্তানটি উদ্ধার করে পুলিশ মনুষ্যত্বদের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এ ধরণের অসংখ্য মানব সন্তান প্রতিদিনই পিতৃ পরিচয়হীন ভাবে ডাস্টবিন, খাল-বিল, নালায় পাওয়া যাচ্ছে। সমাজে এ ধরণের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। যা কেউ দেখে কেউ দেখে না। বিশেষ করে নরপশু ধর্র্ষকদের কারণে অভিভাবক মহল শঙ্কিত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ না পেলে আগামী প্রজন্মের কি অবস্থা হয় একমাত্র আল্লাহই জানে। যে দেশে রেলওয়ে পুলিশের একজন পরিদর্শক সহ আরো বেশ ক’জন সহকর্মী কর্তৃক থানায় হেফাজতে আটক এক নারী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় বইছে। সেখানে অবলা নারীরা কোথায় গিয়ে রক্ষা পাবে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়, সে ক্ষেত রক্ষা পাবে কোথায়? শিক্ষক কর্তৃক নিজের ছাত্রী যদি ধর্ষিত হয় তাহলে বলার কি আছে। মনে হয় আমরা আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছি।

লেখক : এম আর মাহমুদ,

সভাপতি – চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব

একজন লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত: