ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এলাকার মানুষ জানেনা লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা হয় কিনা

লামা প্রতিনিধি ::  বান্দরবানের লামা উপজেলা সদরের বাইরে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগ সনাক্ত ও চিকিৎসা সেবা না থাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক মাসে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পদুয়া হাসপাতাল ও চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চৌদ্দ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে বর্তমানে পাঁচজন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উপজেলার সরই ইউনিয়নে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হলো- উদযাপন চাকমা(১৮) ফয়সাল হোসেন (১৯), কমরু সওদাগর (২৬), মো. ফারুক (৩৮), শাহ আলম (২৬), মো. ইসমাইল (৩২), মো. সাকিল (২১), চম্পা কর্মকার (২২), জায়েদ হোসেন (১১), মো. সোহেল (১২), কপিল উদ্দিন (৩৫), মহিউদ্দিন (১৮), আবুল কালাম (৫০) আমেনা বেগম (৩০)।
লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মোঃ সোহেলের পিতা মোঃ ফরিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর উঠছিলো। বাড়ির পাশের ক্যায়াজু পাড়া বাজারের ঔষুধের দোকানের ডাক্তার(পল্লী চিকিৎসক) থেকে চিকিৎসা নিয়ে খাওয়ার পরও জ্বর যাচ্ছিলোনা। পরে লামা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা আছে কিনা এলাকার অনেক জন থেকে জিজ্ঞাসা করেছি। কেউ জানেনা লামা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের হয় কিনা। পরে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৬ আগষ্ট আমার ছেলেকে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ভর্তি করাই। আমার ছেলে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা রয়েছে।
এদিকে উপজেলার সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদুল আলম বলেন, গত একমাসে আমার ইউনিয়নে চৌদ্দজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারী বা বেসরকারীভাবে ডেঙ্গু রোগ সনাক্তের কোন ব্যবস্থা ও সরকারী ভাবে চিকিৎসা সেবা না থাকায় রোগীদের অভিভাবকরা পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া, পদুয়া ও চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি করাচ্ছে। বর্তমানের চৌদ্দ জনের মধ্যে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসিধিন আছে। বাকীরা সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসেছে। গত ১৯ আগষ্ট লামা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ক্যায়াজু পাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এসেছিলো। বিকালে তারা পুঃনরায় উপজেলা সদরে চলে যায়।
এদিকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদুল হক বলেন, গত সোমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত উপজেলার সরই এলাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য গত সোমবার একটি টিম পাঠিয়েছি। সেখানে দশজনকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের কারো কাছে ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। তবে তিনি আরো বলেন, জ্বর কমছেনা এমন রোগীরা লামা হাসপাতালে আসলে আমরা চিকিৎসা দিবো।
তবে লামা হাসপাতালে মোট আশি জন ডেঙ্গু রোগী পরীক্ষার ব্যস্থা রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের ডেঙ্গু রোগীদের খোঁজ খবর নিতে পূর্বে থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। তারা জানালে আমরা চিকিৎসা টিম পাঠাবো।
বিষয়টি নিয়ে চট্রগ্রামের লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, গত দশদিনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন থেকে চারজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ চারজন রোগীর মধ্যে তিনজন রোগীকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এর মধ্যে সোহেল নামের(১২) এক রোগী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মঙ্গলবার সরজমিনে ডেঙ্গু প্রবন সরই ইউনিয়নের ক্যায়াজুপাড়া এলাকায় দেখা যায়, এলাকার লোকজন ডেঙ্গু আতঙ্কে ভোগছে। সরকারী ভাবে এলাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা সেবা না থাকায় লোকজনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল  চকরিয়া নিউজকে বলেন, সরই ইউনিয়নে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে জনমনে আতংক বাড়ছে। এডিস মশার বংশ-বিস্তার ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার সারাদিন সরই বাজার ও আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফগার মেশিন দিয়ে এডিস মশার ধ্বংসে অভিযান পরিচালনা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ জান্নাত রুমি  চকরিয়া নিউজকে বলেন, লামার ডেঙ্গু প্রবন সরই ইউনিয়নে সব সময় মেডিকেল টিম অবস্থান করার জন্য লামা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার কল্পনা কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি।

পাঠকের মতামত: