ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

রোহিঙ্গাদের ঈদ: কোরবানি দিয়েছে অনেকেই

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার ::
দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করলো কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। নামাজ আদায়ের পর তাদের অনেকেই কোরবানিও দিয়েছে। যারা কোরবানি দিতে পারেনি, সরকার ও এনজিও’র পক্ষ থেকে তাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হয়েছে।

জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়েছে। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অধিকাংশ ইমাম ও মুসল্লিরা। নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে যেন তারা ফিরে যেতে পারে, মোনাজাতে তা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনুছ আরমান বলেন, ‘আমি নিজ উদ্যোগে একটি গরু কোরবানি দিয়েছি। নিজের বাড়ির জন্য কিছু মাংস রেখে বাকি মাংসগুলো আমার প্রতিবেশীদের ভাগ করে দিয়েছি। কারণ, এবছর এনজিও’রা কোরবানির মাংস কম বিতরণ করেছে। বিশেষ করে নিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে মোটেও দেওয়া হয়নি।’

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি জানান, দ্বিতীয় বছরের মতো এখানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছে। আজকে ঈদের নামাজ শেষে শুধু ইমাম, মৌলভীরা নয়, মসজিদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। রাখাইনে আমরা কেউ বাবা-মা, বোনকে হারিয়েছি, আবার কেউ ভাই ও স্বজনকে হারিয়েছি। কবরে পড়ে রয়েছেন আমার মা। নিজে কোনও পশু কোরবানি দিতে না পারলেও অন্তত তাদের জন্য ফাতেহা ও নামাজ তো আদায় করতে পেরেছি।’

উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘এই বছর তেমন কোনও মাংস বিতরণ হয়নি। অবশ্য যেটুকু পেয়েছি, অন্তত আমার ব্লকের সব রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাগ করে দিতে পেরেছি। এরপরও রাখাইনের চেয়ে এই রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে আমরা শান্তিতে রয়েছি।’

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ লালু মাঝি জানান, ‘রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হলেও নিজ দেশের জন্য মায়া হয় আমাদের। আমরা নিরাপদে রাখাইনে ফিরে যেতে চাই, আজকে ঈদ জামাত শেষে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা ছিল।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, এবছর এক লাখ ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে দুই কেজি করে মাংস দেওয়া হয়। অন্তত পাঁচ হাজার পশু জবাই করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। সরকার ও এনজিওরা মিলে এসব পশু কোরবানি দিয়েছে। একইভাবে স্থানীয়দের মধ্যেও কোরবানির পশু বিতরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এবছর কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যথাসম্ভব মাংস বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন ও ব্যক্তিগত ভাবেও কোরবানির পশু দান করা হয়েছে।’বাংলাট্রিভিউন

পাঠকের মতামত: