ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ার লোকালয়ে ১০টি অবৈধ ইটভাটা

pic-uk-শফিক আজাদ, উখিয়া:

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন অজ পাড়া গাঁয়ের লোকালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১০ টি ইট-ভাটা। এরমধ্যে শুধুমাত্র উপজেলার হদলিয়া পালং ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে ৬ টি অবৈধ ইটভাটা। ইট-ভাটার নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়ছে। ইট-ভাটার চারিদিকে অসংখ্য গ্রামের অগনিত ফলবান বৃক্ষে কোন ফুল ফল আসছে না, ধ্বংস হচ্ছে পানের বরজ ও শাকসবজিসহ বোরো চাষাবাদ। বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ ও ফসলী জমির মাটি এসব ইট-ভাটায় ব্যবহৃত হওয়ায় একদিকে যেমন ফসলী জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, অপর দিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ইট-ভাটা থেকে নিগর্ত হওয়া বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আতংক বিরাজ করছে ইট-ভাটা এলাকায় আশেপাশের গ্রামগুলোতে। অথচ খবর নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন সময়ে এসব অবৈধ ইট-ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে ও কোন কাজ হয়নি আদৌ। ফলে দিন দিন এসব অবৈধ ইটভাটার মালিকরা আরো বেপরোয়াভাবে ইটভাটা সম্প্রসারণ করে বহাল তবিয়তে ইট বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে উখিয়া উপজেলার হদলিয়া পালং ইউনিয়নের খেওয়াছড়ি ও পাতাবাড়ি সংলগ্ন ই্টভাটা ঘুরে দেখা গেছে, রামু খুনিয়াপালং এলাকার শাহ আলম প্রকাশ শানু কোম্পানী মালিকানাধীন এমআরসি ব্রিক ফিল্ড এবং তৎসংলগ্ন চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা পলাশ বড়–য়া মালিকানাধীন কেআরবি ব্রিক ফিল্ডে মাঠি বিক্রির জন্য ফসলি জমির উপর বিরাট বিরাট গর্ত করে মাটির স্তুপ করা হয়েছে। নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে ইটভাটা এলাকাগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। এতে চাষাবাদের ক্ষয়ক্ষতি সহ স্বাভাবিক জীবন যাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জমির সবচেয়ে ঊর্বর অংশ হচ্ছে ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি ওপরের অংশ। জমির উক্ত অংশটুকু (টপ সয়েল) ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে ১৫ থেকে ২৫ বছর স্বাভাবিক ফলন হয় না। অন্যদিকে ইটভাটাগুলোতে নিচু টিনের চিমনির পরিবর্তে ১২০ ফুট উঁচু পাকা চিমনি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটা মালিক তা মানছেন না। টিনের চিমনিগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ইটভাটা এলাকার পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দু সোবাহান, সালাম উলাহ সহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, নিচু চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া শ্বাস নিঃশ্বাসের সাথে মানুষের কন্ঠনালীতে প্রবেশ করে নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে এলাকার বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে স্থানীয় বনাঞ্চলের মুল্যবান কাঠ। ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুল মজিদ জানান, ইটভাটায় দৈনিক প্রায় ৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়ে থাকে। এতে বন উজাড় হয়ে পরিবেশের জন্য হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ার কারনে এ ই্টভাটা গুলোতে দেদারচে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এখানে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয় বন জঙ্গলে সবুজ বৃক্ষ নিধন করে ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইতিপূর্বে খেওয়া ছড়ি পলাশ বড়–য়ার মালিকানাধীন কেআরবি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪ লক্ষাধিক ইট জব্দ করে এবং শিশু শ্রমিক ব্যবহারের জন্য জরিমানা আদায় করেন। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া বন রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা একাধিক ইট-ভাটার কোন অনুমোদন নেই। এসব ইট-ভাটা গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিকট জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিকের সাথে একাধিকবার কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি । কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, কিছু ইটভায় পরিবেশে ছাড় থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটায় কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব অবৈধ ইটভাটায় একাধিকবার অভিযানও করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে সংশ্লিষ্ঠ ইটভাটার মালিকেরা আবারো কার্যক্রম শুরু করে দেয়। আসন্ন বর্ষার কারনে ইটভাটার সময় শেষ হয়ে আসছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান চালানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের সখে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন অবৈধ ব্যবসা এখানে করতে দেওয়া হবে না।

পাঠকের মতামত: