ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

লামায় ৪ খালের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, জনবসতি হুমকির মুখে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্রিজ-কালভার্ট

লামা প্রতিনিধি ::  চলতি বর্ষা মৌসুমে লামা উপজেলার ৪টি খালের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলী জমি ও ব্রিজ-কালভার্ট ভাঙনের শিকার হয়েছে। বর্তমানে ৫ শতাধিক ঘর-বাড়িসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্রিজ-কালভার্ট হুমকির মুখে রয়েছে। আবারো মুষলধারে টানা বর্ষণ শুরু হলে উপজেলার, ইয়াংছা খাল, লামা খাল, নুনারঝিরি খাল এবং বগাইছড়ি খালের ভাঙনে এসকল ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক টানা বর্ষণের ফলে লামা উপজেলার পৌরসভা এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়। এসময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি ঝিরি বা খাল গুলোতেও পানি বৃদ্ধি পায়। পাহাড়ি ঢলের পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র স্রোতের কারণে উপজেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত ৪টি খালের তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ইয়াংছা খাল, লামা খাল, নুনারঝিরি খাল এবং বগাইছড়ি খালের আকষ্মিক ভাঙনে স্থানীয় বাসিন্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, এসকল খালের ভাঙনে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০একর ফসলী জমি, শতাধিক ঘরবাড়ি এবং বেশ কয়েকটি ব্রিজ-কালভার্ট ভাঙনের শিকার হয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাষ্টার সহিদুজ্জামান জানান, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা খালের ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিপুল সংখ্যক ফসলী জমি ও বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এ খালের ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে অত্র এলাকার একমাত্র দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইয়াংছা মাদ্রাসা ফয়জুল উলুম হামিউচ্ছুন্নাহ হেফজখানা ও এতিমখানা। ইতিমধ্যে মাদ্রাসাটির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের অযুখানাসহ অধিকাংশ জায়গা খালের ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। এখনই ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই ভবনসহ বাকি অংশটুকু উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতের টানে খালে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এতে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়বে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার প্রায় তিনশ’ কোমলমতি শিক্ষার্থী। একই ইউনিয়নের বগাইছড়ি খালের ভাঙনে বিপুল সংখ্যক ফসলী জমিসহ ৫০টির অধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এ খালের ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে শতাধিক বসত-ভিটা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, বগাইছড়ি খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে খালের ভাঙন তীব্র আকার ধারন করার জন্য দায়ী। বহিরাগত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে খাল থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানেও ৪ টি মেশিন দিয়ে একটানা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার জানান, বগাইছড়ি খালের ভাঙনে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বগাইছড়ি ব্রিজ হুমকীর মুখে পড়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০, শত বর্ষের ডেল্টা প্ল্যানের অংশ হিসেবে ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল পুনঃ খনন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লামা পৌর এলাকার নুনারঝিরি (খাল) পুনঃখনন করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লামা পৌরসভার ৩ ও ৭নং ওয়ার্ড এবং সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত নুনারঝিরি (খাল) খনন কাজটি নি:সন্দেহে একটি ভালো ও যুগোপযোগী উদ্যোগ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক টানা বর্ষণে ঝিরির দু’পাড়ে ব্যাপক ভাবে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে অসংখ্য ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। মাষ্টার পাড়া সংলগ্ন একটি ব্রিজের একাংশ দেবে গেছে। এছাড়া খালের মাটি সরে যাওয়ার কারণে আরো একাধিক ব্রিজ-কালভার্ট হুমকির মুখে রয়েছে। নুনারঝিরি এলাকার জরিনা বেগম জানান, স্বামি না থাকায় মানুষের কাজ করে দুঃখ কষ্টে কোনভাবে সংসার চালাই। এ অবস্থায় নুনারঝিরির ভাঙনে ইতিমধ্যে রান্না ঘরটি ভেঙে গেছে। মুল ঘরটিও যে কোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। এ অবস্থায় কোথায় যাব, কারও কোন সাহায্য পাচ্ছিনা। লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেছেন নুনারঝিরি খালের ভাঙনে ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এছাড়া, উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়নের লামা খালের অংসখ্য স্থানে ভাঙন দেখা দেয়া বিপুল সংখ্যক ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে খালের দু’পাশের বিস্তীর্ণ জমি ও ঘরবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। স্থানীয়রা এসকল খালের ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

পাঠকের মতামত: