ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় আড়াই বছরের শিশু ওয়াসী খুন: ঘাতক মুন্নি আদালতে দায় স্বীকার করলেও এখনো চার্জসিট হয়নি

চকরিয়ায় নিহত আড়াই বছরের শিশু আল ওয়াসী, গ্রেফতারকৃত ঘাতক মুন্নী আক্তার (ফাইল ছবি)।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবা প্রেস ব্যবসায়ী সাহাবউদ্দিনকে স্বামী হিসেবে না পাওয়ার প্রতিশোধেই আড়াই বছরের শিশু আল ওয়াসীকে ভাড়াবাসা থেকে ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে রাতের আঁধারে মাতামুহুরী নদীতে নিক্ষেপে হত্যা করা হয়েছে মর্মে আদালতে জবানবন্দি দেন গ্রেফতারকৃত ঘাতক মুন্নি আক্তার। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারী বুধবার বিকেলে মুন্নি আক্তারকে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব’র আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ সময় আদালতের কাছে মুন্নি নিজেকে হত্যাকা-ের জড়িয়ে জবানবন্দি দিলেও ইতোমধ্যে ঘটনার পর ৬মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনো তদন্ত কর্মকর্তা আলোচিত এ মামলার অভিযুক্ত একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দাখিল করতে পারেনি। অবশ্য ঘটনার পর মাত্র দুইদিনের মাথায় আলোচিত এ হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়ে নেন পুলিশ। ঘাতক মুন্নী আক্তার চকরিয়া পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাটাখালী এলাকার খোন্দকার পাড়ার খলিলুর রহমানের মেয়ে। নিহত শিশু ওয়াসী পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার সাহাবউদ্দিন ও রুনা আক্তার দম্পতির ছেলে।

থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারী বিকাল আনুমানিক চারটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার ভাড়াবাসার সামনে খেলা করার সময় শিশু আল ওয়াসীকে চকোলেট কিনে দেয়ার নামে ফুসলিয়ে নিয়ে যান ঘাতক মুন্নি আক্তার। এরপর চকরিয়া থানা পুলিশ শিশুটি উদ্ধার এবং ঘাতককে গ্রেফতারে অভিযানে নামেন। শুরুতে পুলিশ সবুজবাগ এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। তাতে দেখা মেলে ঘাতক মুন্নি কৌশলে শিশু ওয়াসীকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। ততক্ষনে ঘাতক মুন্নি চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশনে গিয়ে নেমে কোলে করে হেঁটে মাতামুহুরী নদীর সেতুর একেবারে মাঝখানে গিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করে শিশু ওয়াসীর মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এদিন রাত আটটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালীস্থ বাপের বাড়ি থেকে মুন্নি আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের আদ্যোপান্ত অকপটে স্বীকার করে মুন্নি। এ ঘটনায় ২২ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে শিশুটির মা রুনা ইয়াছমিন বাদী হয়ে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রুজু করেন একমাত্র আসামী মুন্নির বিরুদ্ধে।’ ওই মামলায় মুন্নিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে পাঠালে বিচারক রাজীব কুমার দেব’র কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মুন্নি আক্তার জানায়, শিশু আল ওয়াসীর বাবা সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। সেইসূত্রে দুইজনের মধ্যে বিয়ের কথা থাকলেও তাকে ছেড়ে রুনা ইয়াছমিনকে বিয়ে করেন সাহাব উদ্দিন। এ কারণে তার জীবন তছনছ হয়ে যায়। তাই সাহাব উদ্দিনের জীবনও দুর্বিষহ করে তুলতে তার শিশুপুত্রকে হত্যার পথ বেঁছে নেয়।

ঘাতক মুন্নি জবানবন্দিতে জানায়, ঘটনার দিন ২১ জানুয়ারী সোমবার বিকেল চারটার দিকে শিশু আল ওয়াসী বাড়ির কাছের সড়কে খেলছিল। এ সময় একটি চিপস দিয়ে ওয়াসীকে কোলে তুলে সবুজবাগের পশ্চিমাংশের বিলের মাঝখানের পথ দিয়ে স্বপ্নপূরী ক্লাবের সামনে যান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর একটি টমটম গাড়ি যোগে পৌরশহরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসস্টেশনে গিয়ে নামেন। এর পর কোলে করে হেঁটে মাতামুহুরী নদীর সেতুর মাঝখানে গিয়ে নদীতে নিক্ষেপ করেন শিশু ওয়াসীকে। এরপর শিশুটির মৃত্যু হয়।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার এসআই (বর্তমানে বদরখালী পুলিশর ফাঁিড়র আইসি) মো. ইসমাইল বলেন, শিশু ওয়াসী খুনের ঘটনার পর মাত্র দুইদিনের মাথায় হত্যাকা-ের আদ্যোপান্ত উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি আদালতের কাছে গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামি মুন্নি আক্তার হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

তবে ময়না তদন্ত রির্পোট আসতে বিলম্ব এবং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগে এমই’র অনুমতি নিতে দেরী হওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র (চাজসিট) দাখিল করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকালের মধ্যে এমই অনুমোদন নিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন পাঠাবো। অনুমতি পাওয়া গেলেই এরপর অতি শ্রীঘ্রই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করবো। ##

পাঠকের মতামত: