ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি: নেমেছে পানি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিত্র

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :: বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। গত সোমবার সকাল থেকে রোদের দেখাও মিলেছে। এতে বন্যা আতঙ্কে থাকা মানুষগুলোর মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দেয়। তবে লোকালয় থেকে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিত্র। কোথাও বেড়িবাঁধ, কোথাও সড়ক লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার সেই চিরচেনা দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে পড়ছেন মানুষ। কেননা সেই ভগ্নদশার চিত্র ফের কখন মেরামত হবে সেই দুশ্চিন্তাও ভর করছে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে।

গতকাল সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সিংহভাগ এলাকার বসতবাড়ির পানি নেমে গেলেও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষগুলো। একনাগাড়ে এক সপ্তাহ ধরে বানের পানি বসতবাড়িতে অবস্থান করায় বাড়ির ভেতর ২ থেকে ৩ ফুট করে পলি জমে যায়। সেই পলি অপসারণ করতে গিয়ে বেশ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। এর পরও বানের পানি নেমে যাওয়ায় তারা বেশ খুশি। এদিকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের সদর কাকারার বেড়িবাঁধ কাম সড়কটি নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায়। একইভাবে কয়েকশ ফুট দূরের কাকারা- মেনিবাজারস্থ মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কটি বিশাল গাইড ওয়ালসহ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো মানুষ।

এছাড়া ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়ক, চিরিঙ্গা-বানিয়ারছড়া-বরইতলী-পেকুয়া সড়ক, ছিকলঘাট-কাকারা-মানিকপুর সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ অন্তত ১৫টি সড়ক এবং গ্রামীণ অবকাঠামোগুলোর বিবর্ণ ও ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। গত রবিবার সকালে সড়ক পারাপারের সময় পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাতামুহুরী নদীর আটারকুম পয়েন্টে নিখোঁজ থাকা দিয়ারচর গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. রাজুর (২০) মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনতা। কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানসহ জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এবারের ভয়াবহ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামোর। এই অবকাঠামো যদি সহসা টেকসইভাবে মেরামত করা না হয় তাহলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশি দুর্ভোগের শিকার হবেন মানুষ।

এদিকে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলোতে এখনো কয়েকফুট বানের পানিতে তলিয়ে রয়েছে হাজারো বসতবাড়ি। এই অবস্থায় তাদের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তার ওপর খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকায় অনেকে অর্ধাহারে থাকছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। গতকাল দুপুরে লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের বন্যার্ত ১২০০ পরিবারের মাঝে রান্না করা বিরানী বিতরণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিস ফাইন্ডারের তত্ত্বাবধানে আছিয়া-কাশেম ট্রাষ্ট। অপরদিকে আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ হাজারো পরিবারের মাঝে রান্না করার খাবার বিতরণ করেন বিভিন্ন ইউনিয়নে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ভয়াবহ বন্যায় পুরো উপজেলার অভ্যন্তরীণ যেসব সড়ক-উপসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আগামী একমাসের মধ্যেই মেরামত করে চলাচল উপযোগী করার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, এখনো অনেক এলাকা থেকে পুরোপুরি বানের পানি নেমে যায়নি। তাই পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর আসল চিত্র পাওয়া যাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামোর। এর পর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তা মেরামতের। এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাতে দুর্ভোগের শিকার না হন, সেজন্য অল্প সময়ের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ সড়ক-উপসড়কসহ গ্রামীণ অবকাঠামো টেকসইভাবে মেরামত কাজ শুরু করা হবে। এজন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে আমি যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য।

এদিকে গতকাল বিকেলে চকরিয়ার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজান আলী। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন, ইউএনও নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, এসিল্যান্ড খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাতসহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। পরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন উপজেলা পরিষদের মোহনায়। সভায় উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।

পাঠকের মতামত: