ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

লামায় অথৈ পানি, পাহাড় ধসে নিহত ১, পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::  টানা বর্ষণে ২য় বারের মত বড় ধরনের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বান্দরবানের লামা উপজেলা। রোববার ভোররাত থেকে অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে সকল নদ-নদী, খাল ও ঝিরির পানি। উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, মুহুর্তে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। লামা বাজার সহ আশপাশের সকল এলাকায় পানিতে ডুবে যায়।

এছাড়া ২ সহস্রাধিক বসতবাড়ি পাহাড় ধসে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে। রোববার (১৪ জুলাই) রাত ২টায় লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম মধুঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে বসতবাড়িতে মাটি চাপা পড়লে নুরজাহান বেগম (৫৫) নামে এর নারী মারা যায় ও একই পরিবারের ৬ জন আহত হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা, ত্রাণ ও পূর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের জিআর খাতের আওতায় নিহত নুরজাহান বেগমের ক্ষতিপূরণ বাবদ তার পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও আহত হিসেবে তার ছেলে ও ছেলের বউকে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নগদ টাকা সহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি, লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহেদ উদ্দিন, মিল্কি রাণী দাশ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান, প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা, কাউন্সিলর মো. রফিক, মো সাইফুদ্দিন, ওয়ার্ড মেম্বার আবু সুফিয়ান সহ প্রমূখ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, এই পর্যন্ত লামা পৌরসভার মেয়র ও ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে জানা যায়, মোট ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি ও ২ সহ¯্রাধিক বসতবাড়ি পাহাড় ধসে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ এলাকা পানি নিচে। প্রচুর বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় রোববার রাত ২টায় মো. মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির বসতবাড়িতে পাহাড় ধসে তার বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। মো. মোস্তফা বলে, আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ করে পাহাড় ধসে পড়লে আমরা সবাই দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে প্রাণে রক্ষা হয়। এখন আমরা অন্যের বাড়িত আশ্রিত হয়ে দিনাতিপাত করছি। এছাড়া রুপসীপাড়া, সরই, ফাইতং, আজিজনগর ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ব্যাপক বসতবাড়ি পাহাড় ধসে আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যানগণ।

হঠাৎ করে পানি বাড়ায় বিপাকে পড়ে লামা বাজারে সকল ব্যবসায়ী সহ নিম্নাঞ্চলের বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। অনেক ঘরবাড়ি এখন পানির নিচে। এতে করে থাকা-খাওয়া সহ আবাসন সমস্যায় পড়েছে পানিবন্দি লোকজন। অনেকে পরের ঘরে আশ্রিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল বলে জানান বন্যা ও পাহাড় ধসে ভুক্তভোগী মানুষ। এদিকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যার কারণে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

উপজেলার বেশ কয়েক জায়গায় পাহাড় ধস ও সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় সমগ্র দেশের সাথে লামার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। লামা-চকরিয়া সড়কের মিরিঞ্জিা নামক স্থানে রোববার সকালে পাহাড় ধসে পড়ে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অবস্থা স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী এবং সড়ক ও জনপদ। বৈরি আবহাওয়ার কারণে গাছপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের লাইনে পড়ায় কয়েক স্থানে খুঁটি পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছে লামা বিদ্যুৎ বিভাগ।

খাল ও ঝিরির প্রচন্ড পানির ¯্রােতে ভেঙ্গে পড়েছে কয়েকটি ব্রিজ। আন্ত যোগাযোগের সড়ক গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ।

লামা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য কাজ করছি। যে কোন দুর্যোগের খবর পাওয়া মাত্র গিয়ে তা লাঘোবে কাজ করছি আমরা।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি চকরিয়া নিউজকে বলেন, উপজেলা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আগত লোকজনের থাকা, খাওয়া ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো আমরা খেয়াল রাখছি। তাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সকল দুর্যোগ পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, সাধারণ মানুষের বিপদের সময় আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করছি। জনদুর্ভোগ লাঘোবে আমরা আন্তরিক।

পাঠকের মতামত: