ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পানিতে একাকার শহর-গ্রাম

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::   শহর–গ্রাম সবখানেই দুর্ভোগে আছেন মানুষ। বৃষ্টি হলেই ডুবছে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের সিংহভাগ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন নগরবাসী। গতকালও একই অবস্থা ছিল। আবার কয়েকদিন ধরেই ১৪ উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নে সৃষ্ট বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সেখানেও জলবন্দী হয়ে থাকা মানুষজনের ভোগান্তির শেষ নেই। এ যেন দুর্ভোগ–দুর্দশায় শহর–গ্রাম মিলেমিশে একাকার।

জলাবদ্ধতার জন্য নগরীর বেশিরভাগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে পানি কমার অপেক্ষায় ছিলেন চালকরা। আবার কোথাও চললেও সেখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ছিল আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক গ্রামীণ সড়কেও যানবাহন চলতে পারেনি। ফলে সবখানেই গন্তব্যমুখী লোকজনের ভোগান্তি ছিল বর্ণনাতীত।

মাঝারি বৃষ্টিতেই বেহাল নগরী : চট্টগ্রাম শহরে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তই বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এবং এ সময়েই ডুবেছিল নগরী। অবশ্য এতদিন ভারী বর্ষণ হলেও গতকাল রেকর্ডকৃত বৃষ্টির পরিমাণ বলছে, এটি ছিল মাঝারী মানের বৃষ্টি। আবার বৃষ্টির সময় জোয়ারও ছিল না। তবু নিচু এলাকাগুলো ডুবে যায়। পানি প্রবেশ করে বাসা–বাড়িতেও। তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণেও যেসব বাসা–বাড়িতে পানি ঢুকেনি গতকাল সেখানে পানি ঢুকে যায়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরে ৪২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অবশ্য সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড করা হয়েছে ১১৮ মিলিমিটার। এদিকে বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে চাক্তাই, রাজাখালী ও মহেশখালসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোতে পানির প্রকোপ ছিল কম। অথচ একই সময়ে শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, আড়াকান সড়কের বহাদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে দুই নাম্বার গেইট পর্যন্ত ছিল তীব্র জলজট। এখানে কোথাও কোমর আবার কোথাও হাঁটু সমান পানি ছিল। এসময় পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সড়কে অনেক যানবাহন পানিতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। কোন কোন চালক আবার দুর্ঘটনা এড়াতে স্টার্ট বন্ধ করে রাখে এই সড়কে। বিকেল প্রায় চারটা পর্যন্ত তীব্র জলজট ছিল আরকান সড়কে। দুই নম্বর গেইট এবং ষোলশহর এলাকায় রাস্তার উপর পানির তীব্র স্রোত ছিল। এতে হেঁটে যাওয়া মানুষও ঝুঁকিতে পড়েন। ষোলশহর এলাকায় এ স্রোত থেকে রক্ষায় রাস্তার এপার–উপারে রশি টাঙ্গিয়ে দেয় স্থানীয়রা। সেই রশি ধরেই রাস্তা পার হন সাধারণ লোকজন।

তীব্র জলটের কারণে গোলপাহাড় থেকে প্রবর্তক মোড় এবং দুই নম্বার গেইট থেকে চকবাজার সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সেখানে প্রায় গলা পর্যন্ত পানি জমেছিল। এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে।

এছাড়া জিইসি মোড়, ষোলশহর, চকবাজার ডিসি রোড, গণি কলোনি, কালাম কলোনি, রসুলবাগ, খালপাড় এলাকা, খাজা রোডে পানি জমেছিল। খাজা রোডের বিভিন্ন বাসা–বাড়িতেও পানি প্রবেশ করে। বহাদ্দারহাটের ফরিদারপাড়া তালতলা এলাকায় বিভিন্ন বাসা–বাড়িতেও পানি ঢুকে যায়। এখানে দুর্ভোগের শিকার কেয়া বড়ুয়া বলেন, পানি ঢুকে ঘরের সব আসবাব পত্র ভিজে গেছে। ফ্রিজসহ ইলেক্ট্রনিঙ যন্ত্রাংশও নষ্ট হওয়ার পথে।

এদিকে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর, ছোটপুল, বহদ্দারহাট এককিলোমিটার, ডেপুটি রোড, চৌধুরী স্কুল, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩, ৪,৫ ও ৬নং সড়ক, চান্দগাঁও শরফউদ্দিন আউলিয়া সড়ক, খলিফা পাড়া, ছাত্তার মেম্বার বাড়ি, মাদারবাড়ি, পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকা, কোরবানীগঞ্জ বলুয়ার দিঘির পাড়, আগ্রাবাদ এঙেস রোড, উত্তর কাট্টলীর বিশ্বাস পাড়া, সদরঘাট থানার আইস ফ্যাক্টরি রোড, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, মোহাম্মদপুর রোড, বাদুরতলা বড় গ্যারেজ, জিইসি মোড়, গোসাইলডাঙ্গা, মোহাম্মদপুর, খতিবের হাট এালকার কোথাও হাঁটু এবং কোথাও কোমর সমান পানি ছিল।

এদিকে চকবাজার বড় গ্যারেজ এলাকায় বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন বলে জানিয়েছে সুবল বড়ুয়া। তিনি বলেন, বাসার সব আসবাব পত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এদিকে হালিশহর শাপলা ব্লক থেকে চেরাগী পাহাড়স্থ কর্মস্থলে আসা জসীম সিদ্দিকী বলেন, কোমর সমান পানির জন্য সড়কে গাড়ি চলছে না। তাই বেশিরভাগ এলাকা হেঁটেই এসেছি।

এদিকে বিভিন্নস্থানে আটকে থাকা পানি অপসারণে কাজ করেছে সেনাবাহিনীর পৃথক চারটি টিম। নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র গৃহীত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। প্রকল্পের আওতায় জিইসি, মুরাদপুর, বহাদ্দারহাট এবং প্রবর্তক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ করেন তারা।

সীতাকুণ্ডে বৃষ্টি বেশি : এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সীতাকুণ্ডসহ ১৪টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় জোয়ারের পানির জন্যও দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে আনোয়ারা উপজেরায় টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী এবং হাজারেরও অধিক বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এম নুরুল ইসলাম।

এছাড়া রাউজান উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান অংশে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়নের আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও ছিল একই অবস্থা। বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়িতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখানে বিভিন্ন বাসা–বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। এরমধ্যে সাতকানিয়ার ১৭টি ইউনিয়নের সবগুলোই তলিয়ে যায় পানিতে। হাটহাজারীতে ৮টি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।

আজকের পূর্বাভাস : আজ রোববারের আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, ‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/ বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বর্ষণ হলে চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় ধস হতে পারে।

জোয়ার–ভাটা : কর্ণফুলী নদীতে আজ প্রথম জোয়ার শুরু হবে ভোর ৫টা ৮ মিনিটে এবং দ্বিতীয় জোয়ার আসবে বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে। প্রথম ভাটা হবে সকাল ১১টা ১৪ মিনিটে এবং দ্বিতীয় ভাটা হবে রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে।

পাঠকের মতামত: