ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ইয়াবা নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে তোলপাড়

অনলা্ইন ডেস্ক ::

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উখিয়া উপজেলায় ইয়াবা কারবারি, কতিপয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি ইয়াবা কারবার নিয়ে একাকার হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ এমন অভিযোগটি নিয়ে নতুন করে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের উখিয়া সার্কেলের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান ইয়াবা কারবারিদের জন্য তদবিরকারি জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় রাজনীতিকের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে নিজ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন। এই স্ট্যাটাসটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান এলাকার কতিপয় সরকার দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধির বাধার মুখে ইয়াবা দমন অভিযানে গতি সৃষ্টি করতে পারছেন না। এ কারণেই সোমবার পুলিশের এই চৌকস কর্মকর্তা ইয়াবা কারবারে জোরদার করতে না পারার বিষয়টি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই তুলে ধরেছেন বলে জানান। সেই স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘গুটিকয়েক, হাতে গোনা ২/৩ জন জনপ্রতিনিধির কাছে আমার মনে হয় পুরো উখিয়াবাসী জিম্মি! এসব জনপ্রতিনিধি এবং এসব জনপ্রতিনিধির থানার ওপর ব্যাপক প্রভাব খাটাবার প্রেক্ষাপটে উখিয়াতে কখনোই টেকনাফের মতন ইয়াবা উদ্ধার জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না! উখিয়াতে যদি কোন পুলিশ অফিসার নির্বিঘ্নে দিন কাটাতে চায়, তার একমাত্র উপায় হচ্ছে এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা! এখানে ইয়াবা উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে গেলেই হয় আপনাকে অপবাদের গ্লানি নিতে হবে কিংবা সবসময় একটা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে সময় কাটাতে হবে, না হয় একটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে!

তিনি আরো বলেন, এমন অবস্থানে যতই কেউ শ্রেষ্ঠ অফিসারের তকমা পাক কিংবা সিনিয়র লেভেলের ভরসা বা বাহবা পাক না কেন, এক ধরনের অসহায়ত্ব আর মানসিক অশান্তি নিয়েই দিন কাটাতে হয়!! আফটার অল, অপবাদের চিন্তায় বা উটকো ঝামেলায় পড়ার চিন্তায় যদি নিজের ভেতর কাজ করার উৎসাহে ভাটা পড়তে থাকে, তাহলে তার থেকে কষ্ট একজন অফিসারের আর কিছুই হতে পারে না! সম্ভবত, খুব শিগগিরই নিজ থেকেই ‘আই কুইট’ বলার সময় চলে আসবে, তারপরও আশা করি হয়ত ভালো কিছুই হবে, চেষ্টা করছি পজিটিভ থাকার, সিনিয়রদের ভরসায় মোটিভেটেড থাকার!! আল্লাহ ভরসা!’

এ প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগটি হচ্ছে, এসব জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিকরা ইয়াবা কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। এমনকি তারা (রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি) ইয়াবা কারবারিদের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পর্যন্ত নিজের কাঁধে নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। পুলিশের সদস্যরা কোনো কারবারিকে আটক করা মাত্রই এসব কথিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা ছুটে যান তদবির করে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য।

আর পুলিশের কঠোর মনোভাবের কারণে বা অন্য কোনো কারণে কারবারিদের ছাড়িয়ে নিতে না পারলে জনপ্রতিনিধি এবং কথিত রাজনীতিকরা রাগ-গোস্বা করে উঠে পড়ে লেগে যান।

এমনকি এ অবস্থায় তখন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ গ্রহণের মতো মিথ্যা অভিযোগ’ সম্বলিত ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং ভিডিও ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করেন না।
এই পুলিশ কর্মকর্তার আরো অভিযোগ হচ্ছে, তিনি সম্প্রতি একজন ইয়াবা কারবারিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া কারবারি সরকার বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কট্টর সমর্থকও বটে। তবুও কথিত রাজনীতিক এবং জনপ্রতিনিধিরা পুলিশের নিকট তদবির করেন তাকে ছাড়িয়ে নিতে। কিন্তু তাতে বিফল হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের হেনস্থা করার কৌশল হিসাবে আটক ইয়াবা কারবারিকে একজন ভালো মানুষ সাজানোর জন্যও উঠেপড়ে লেগে যান।

আটক ইয়াবা কারবারি কট্টর বিএনপি বা কট্টর সরকার বিরোধী হলেও তাকে সরকার সমর্থিত বানাতেও তারা ভুল করেন না। এমনকি ইয়াবা কারবারিদের পক্ষ নিয়ে কথিত জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিকরা কারো সঙ্গে কথিত জায়গা-জমির বিরোধ খুঁজে বেড়ান সরকার পক্ষকে ডুবিয়ে কারবারিকে কৌশলে বাঁচানোর জন্য।

আবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সরকারের নানা পর্যায়ে পর্যন্ত ইয়াবা কারবারিদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ প্রেরণেও সহযোগিতা করে থাকেন। একজন বড় মাপের ইয়াবা কারবারিকে হাতেনাতে আটক করার পর উখিয়ায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ ঘটনায় একদম প্রকাশ্যে ইয়াবা কারবারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বছরের মে মাসে ইয়াবা পাচারের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ইয়াবায় জিরো টলারেন্সের ঘোষণার পর কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা দমন জোরদার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খোদ উখিয়া-টেকনাফ আসনের দলীয় এমপি এবং ইয়াবায় তালিকাভুক্ত আবদুর রহমান বদিকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পর্যন্ত করা থেকে বিরত থাকেন।

সর্বশেষ টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা দমনে এ পর্যন্ত শতাধিক কারবারি কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারালেও উখিয়ায় এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন মাত্র দুইজন। পুলিশের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় উখিয়ায় ইয়াবা বিরোধী অভিযান জোরদার করা হলে কিছু দলীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয়।

টেকনাফে পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা ইয়াবা কারবার একটি সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসলেও উখিয়া উপজেলায় তা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সদস্যদের মানসিকভাবে দুর্বল করে ইয়াবা দমন অভিযান থেকে বিরত রাখার কৌশল হিসাবেই কথিত জনপ্রতিনিধি, কতিপয় রাজনীতিক ও ইয়াবা কারবারিরা একাকার হয়ে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ বলেন- ‘এসব কথা মুখ থেকে বলতেই এখন লজ্জা বোধ হয়। আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে যারা রাজনীতি করে সেইসব লোক ইয়াবা কারবারি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সেই অবৈধ টাকা তারা খরচ করছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। তবুও আমাদের কতিপয় নেতা সামান্য আর্থিক সুবিধা বা ভোটের রাজনীতির কথা বলে সরকার বিরোধী ব্যক্তিদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ’ সুত্র-কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত: