ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে : জাতিসংঘ

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের অন্যতম তদন্তকারী রাধিকা কুমারাস্বামী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের শেকড় মিয়ানমারে রয়েছে এবং সেদেশেই তাদেরকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিকে ‘গণতান্ত্রিক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুমারাস্বামী বলেন, সু চিকে ‘গণতান্ত্রিক হতে হবে, যেমনটা তিনি বলেছিলেন।’
কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না মিয়ানমার। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন,ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সাত লাখেরও বেশি মানুষ। রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে যে নৃশংসতা চালানো হয় তার তদন্ত করেছিল জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। তদন্তকারীরা তদন্ত শেষে বলেছিলেন, গণহত্যার উদ্দেশে এসব নির্যাতন করা হয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এসব গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে জাতিসংঘের এ রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ উত্থাপন করছে।ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন রাধিকা কুমারাস্বামী। বুধবার (২৬ জুন) দ্য হেগে রাষ্ট্রহীনদের বিষয়ে আয়োজিত এক বৈশ্বিক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার পর রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। বলেন, ‘কর্মজীবনে বিভিন্ন স্থানে বহু নৃশংসতা দেখেছি আমি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ ও তাদেরকে জোর করে উৎখাতের ঘটনা আমার অন্তরাত্মাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রহীনতাই হলো ভয়াবহ রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ।’রাধিকার মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সংকটের মতো এমন ভয়াবহতা তিনি দেখেছেন রুয়ান্ডা গণহত্যায়। মিয়ানমারে কিভাবে পলায়নরত মানুষকে সেনাবাহিনী গুলি করেছে, কিভাবে নারীদেরকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে, কিভাবে ঘরের ভিতর শিশুদের পর্যন্ত রেখে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে সে সম্পর্কেও তিনি বলেছেন।রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাধিকা। তিনি বলেছেন, একই সঙ্গে সহিংসতার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তার মতে, ‘এসব মানুষকে মিয়ানমারে জোর করে ফেরত পাঠানোর আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, সেখানকার পরিবেশ উপযুক্ত কিনা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের পথ পরিষ্কার কিনা।’রাধিকা কুমারাস্বামী জানান, তাদের মিশন প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ সেপ্টেম্বরে নতুন একটি বিচারিক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে, যাতে তারা মিয়ানমারের ওইসব জেনারেলের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের সহিংসতার পর পরই তদন্তকারীরা যখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান তখন তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল ভীষণ হতাশা। কিন্তু গত মাসে যখন তদন্তকারী টিম আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছিল তখন রোহিঙ্গাদেরকে অধিক সংগঠিত দেখা গেছে। তারা কী চায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের হতাশার বিষয়টি অনেক বেশি পরিষ্কার। তারা চায় ন্যায়বিচার ও নাগরিকত্ব।মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী অং সান সুচি অব্যাহতভাবে দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করছেন উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাধিকা। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি তার (সু চি) মধ্যে পরিবর্তন আসবে। তিনি এক সময় যেমনটা বলেছিলেন তেমন গণতান্ত্রিক হবেন। রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে পূর্ণাঙ্গ অধিকারের নিশ্চয়তা নিয়ে।’

পাঠকের মতামত: