ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়া হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বেতনের টাকার জন্যই অভিমানে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে মাসিক বেতনের টাকা দিতে না পেরে অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে শারমিন আক্তার (১৩) নামের এক শিক্ষার্থী। গত সোমবার সকালে বাড়ির পেছনে পাহাড়ের ভেতরে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পরিবার ও প্রতিবেশি লোকজন। নিহত শারমিন আক্তার হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। তাঁর বাড়ি হারবাং ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন পহরচাঁদা (ডেবলতলী) এলাকায়। বাবা আবদুল গফুর বেঁেচ নেই। বাড়িতে আছেন মা ও একটি বড়বোন। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও স্থানীয়ভাবে জানাজনি হয় গতকাল বুধবার। এরপর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।

শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের মা মাবিয়া খাতুনের বরাত দিয়ে হারবাং ইউপির ৫নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) রফিক আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, শারমিন আক্তার এবছর হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছেন। পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাকে উপবৃত্তির সুবিধায় সংযুক্ত করেছে। কিন্তু এখনো উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়নি।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথমদিন পরীক্ষাও দিয়েছে শারমিন। অবশ্য তাঁর আগে মেয়ে শারমিন আক্তার পরীক্ষার ফিস ও মাসিক বেতনের টাকা বকেয়া থাকার কথা মা মাবিয়া খাতুনকে জানান। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওই টাকা আনতে তাকে (শারমিন) অন্য শিক্ষার্থীদের মতো চাপ দেন বলেও জানান।শিক্ষার্থীকে বেতনের জন্যে ক্লাসে সকল শিক্ষার্থীদের সামনে অপমান করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ইউপি মেম্বার বলেন, বাড়িতে মায়ের হাতে টাকা না থাকায় যথাসময়ে পরীক্ষার ফিস ও মাসিক বেতনের টাকা দিতে পারেনি। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে শারমিন। ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিমানের জেরে রোববার দুপুরে বাড়ি থেকে চলে যান শারমিন। এরপর বিকাল থেকে রাত অবদি তাকে খোঁজ করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে প্রতিবেশি লোকজনের দেয়া খবরের ভিত্তিতে বাড়ির পেছনের পাহাড়ের ভেতরে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

জানতে চাইলে হারবাং ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, পারিবারিক অভাব অনটনের কারনে ভর্তি হবার পর থেকে শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারকে বিদ্যালয়ে বিনাবেতনে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাঁর বাবা বেঁেচ নেই, সেইজন্য আমরা উদ্যোগী হয়ে শারমিন আক্তারকে উপবৃত্তির আওতায় অর্ন্তভুক্ত করেছি। সেখানে তাঁর কাছে বেতনের টাকা দাবি করার বিষয়টি অযোক্তিক।

অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার জানামতে শারমিনের কাছে কোন ধরণের টাকা চাওয়া হয়নি। এমনকি টাকার জন্য তাকে চাপ দেয়া বা বকাঁঝকাও করা হয়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদেরকেও পীঁড়া দিয়েছে। শুনেছি, পারিবারিক কলহে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে সে আত্মহত্যা করেছে। আর এই ঘটনাটিকে রং লাগিয়ে কতিপয় মহল বিদ্যালয়ের সুনাম বিনষ্ট ও শিক্ষকদের হয়রাণি করতে অপচেষ্ঠা করছেন।

ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান। তিনি বলেন, বাড়ির পেছনে একটি পাহাড়ে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ দেখে পরিবার ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার আমাকে ঘটনাটি জানান। তাৎক্ষনিক আমি ঘটনাস্থলে পরিষদের চৌকিদার পাঠিয়ে লাশটি উদ্ধার করি। পরে বিষয়টি চকরিয়া থানার ওসিকে জানাই। শুনেছি, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। #

পাঠকের মতামত: