ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্বর্ণমেলায় প্রথমদিন সাদা হল ৮২৯ ভরি সোনা

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

নগরীতে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী স্বর্ণমেলা-২০১৯। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের পিএইচপি ভবনে শুরু হওয়া মেলার প্রথমদিন ১১ জন ব্যক্তি বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কারের বিপরীতে আয়কর জমা দিয়েছেন ৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ছিলো ৮২৯ ভরি স্বর্ণ, আড়াই ক্যারেট হীরা এবং ১৭০ ভরি রৌপ্য। অঘোষিত অথবা অবৈধ স্বর্ণালঙ্কার আয়কর বিভাগের নির্ধারিত কর পরিশোধ করে বৈধ করার সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর কর্মকর্তারা।
গতকাল দুপুরে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বর্ণমেলার উদ্বোধন করেন। বক্তব্যে মেয়র বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের হতাশা ছিলো। বিভিন্ন সময় তারা প্রশাসনের দ্বারা হয়রানির শিকার হতেন বলে অভিযোগ করতেন। এ ব্যাপারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কয়েকবার আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাদের সমস্যা সমাধান করতে সেই সময় চেষ্টাও করেছিলাম। বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। সরকার জনগণের সুবিধা অসুবিধা চিন্তা করে। এরই অংশ হিসেবে স্বর্ণ ব্যবসার বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই স্বর্ণমেলার আয়োজন করেছে আয়কর বিভাগ। ব্যবসায়ীরা তাদের মজুদকৃত স্বর্ণালঙ্কারের নির্ধারিত কর পরিশোধ করে বৈধ করতে পারছেন। তাই আমি মনে করি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) কালিপদ হালদার বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একটা শৃঙ্খলার ভিতর আনার জন্যই এনবিআর স্বর্ণমেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এনবিআর শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়-এ বার্তা দিতেই আমরা চট্টগ্রামেও স্বর্ণমেলার আয়োজন করছি। দেশের রাজস্বের সিংহভাগ আসে চট্টগ্রাম থেকে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কর পরিশোধ করে বুক ফুলিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন। তখন আর তাদের কেউ হয়রানি করতে পারবে না। এছাড়া বর্তমানে সরকার স্বর্ণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে। এতে ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কারণ নেই।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, স্বর্ণের কর পরিশোধের বিষয়ে বিভিন্ন মার্কেটে সমিতির পক্ষ থেকে আমরা মিটিং করেছি। কর পরিশোধের তাগাদা দিয়েছি। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এমনিতে পাঁচ ধরনের কর পরিশোধ করতে হয়। তারপরেও হয়রানি থেমে থাকে না। নগরীতে রয়েছে ৫ হাজার ২০০ জুয়েলারি দোকান। এর মধ্যে বৈধ ১ হাজার ৭০০টি। আমরা যারা করের আওতায় আছি, আমাদের ওপর কর শুধু বেড়েই যাচ্ছে। অথচ যারা করের আওতায় নেই তারা দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাই চট্টগ্রাম বিভাগের কর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের করের আওতা বাড়ানোর প্রতি নজর দেয়া উচিত। করের আওতায় সেটি হবে অসম প্রতিযোগিতা। করের আওতা বাড়লে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। দেশ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে।
স্বাগত বক্তব্যে অতিরিক্ত কর কমিশনার মফিজ উল্লাহ বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মেলার ৩ দিন ছাড়াও আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কর অঞ্চলে অঘোষিত স্বর্ণের কর পরিশোধ করে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর কর কমিশনার ও স্বর্ণমেলা-২০১৯ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কাস্টম এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন।
উল্লেখ্য, আয়কর বিভাগ আয়োজিত এ মেলায় নিবন্ধিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের অঘোষিত ও মজুদ স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার, কাট ও পলিশড ডায়মন্ড এবং রৌপ্যের ঘোষণার বিপরীতে কর পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ভরি স্বর্ণে ১ হাজার টাকা, রৌপ্যের জন্য ৫০ টাকা, প্রতি ক্যারেট কাট ও পলিশড ডায়মন্ডের জন্য ৬ হাজার টাকা কর পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া মেলায় রয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায় জড়িত নতুন করদাতাদের ইটিআইএন প্রদান, চট্টগ্রামের প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য পৃথক বুথে ঘোষণা ফরম গ্রহণ, আয়কর পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংকের বুথ ও পরামর্শ কেন্দ্র। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। নতুন করদাতাদের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয় পত্রের ছায়াকপি সঙ্গে আনতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত: