ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইকো ট্যুরিজমের আওতায় আসছে সোনাদিয়া- ঘটিভাঙ্গা দ্বীপ

আতিকুর রহমান মানিক ::   ইকো টুরিজমের আওতায় আসছে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনাদিয়া দ্বীপ ও সংলগ্ন ঘটিভাঙ্গা এলাকা। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে ইকো ট্যুরিজমের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে সরকার ।

সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপে ইকো ট্যুরিজমের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- নদী এবং সমুদ্র ভ্রমণ, পায়ে হেঁটে দ্বীপ ভ্রমণে প্রাকৃতিক পথ, সমুদ্র সৈকতের সুবিধাদি, ম্যানগ্রোভ বনায়ন এবং বন্য প্রাণী পুনর্বাসন, বিভিন্ন প্রকার কচ্ছপের আবাসস্থল সংরক্ষণ, পাখিদের অভয়আরণ্য নিশ্চিতকরণ, স্বাদু পানির পুকুর খনন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি ব্যবহার উপযোগী করা, সৌরশক্তির ব্যবহার, গলফ ও লন টেনিস খেলার মাঠ তৈরি করা, শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক, পরিবেশবান্ধব হোটেল-মোটেল, সুইমিং পুল, মসজিদ, জাদুঘর, কমিউনিটি সেন্টার, ফুলের চাষের মাঠ, শৈবাল (স্পিরিলুনা) চাষ, মুক্তা চাষ, কমিউনিটি ট্যুরিজম, রাস্তা সংস্কার এবং নতুন রাস্তা তৈরি, রেগুলেটর সংস্কার এবং নদী ও সমুদ্র ভ্রমণে সুবিধাদি স্থাপন।

প্রকল্প এলাকার মধ্যে প্রস্তাবিত নদী ভ্রমণ পথের দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার এবং সমুদ্র ভ্রমণ পথের দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার। প্রতিদিন ৩টি করে নদী ভ্রমণ এবং ১টি সমুদ্র ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিটি নদী ভ্রমণের নৌযানে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং সমুদ্র ভ্রমণের নৌযানে সর্বোচ্চ ১২০ পর্যটক পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি সমীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

‘কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কারিগরি এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণসহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উপর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা একটি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দ্বীপ, যা এখনো পর্যন্ত মানবসৃষ্ট বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং পর্যটনের প্রভাব থেকে মুক্ত। এ প্রকল্পটির আওতাধীন এলাকাটি একটি জোয়ার-ভাটা সমৃদ্ধ কাদাচর, যা পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) অন্তর্ভূক্ত এবং বিলুপপ্তপ্রায় পরিযায়ী পাখিদের আবাসভূমি।

পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এখানে বিভিন্ন মূল্যবান পরিবেশগত উপাদান রয়েছে। এ সমস্ত বিবেচনায় এ প্রকল্পের অধীনে এ দ্বীপটিতে কোন ধরনের ভারী অবকাঠামো নির্মাণ ব্যতিরেকে ইকো ট্যুরিজমের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এতে আরো জানানো হয়, পায়ে হাঁটার প্রাকৃতিক পথটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে যথাক্রমে ৮ কিলোমিটার এবং ৮ মিটার। কাঠ, বাঁশ এবং অন্যান্য স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে পথটি তৈরি করা হবে। সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধন এবং পরিবেশবান্ধব করার জন্য চিহ্নিত বিভিন্ন স্থানে ম্যানগ্রোভ বনায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যান্য বিভিন্ন উৎস হতে হরিণ এবং বানর সংগ্রহ করে এই ম্যানগ্রোভবনে অবমুক্ত করা হবে।

সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপ সমুদ্র সংলগ্ন হওয়ায় নদী এবং খালের পনিতে প্রচুর লবণাক্ততা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ গভীর নলকূপ এবং বৃষ্টির পানি এই এলাকার জন্য প্রধান স্বাদুপানির উৎস। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রিটেনশন পুকুরের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১২টি রিটেনশন পুকুরের সর্বমোট আয়তন ১ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুসজ্জিত বাগান এবং পার্ক এই এলাকাটিকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। ঘটিভাঙ্গা এলাকাটিতে পরিবেশবান্ধব হোটেল-মোটেল তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই হোটেলগুলো তৈরিতে এবং পরিচালনায় পরিবেশ দূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার সুপারিশ করা হয়।

সভায় দ্বীপটিতে পর্যটকদের সমাগম নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, হোটেলগুলোতে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটক রাত্রিযাপন করার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে দ্বীপটিতে পর্যটকদের সমগম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। প্রতিটি হোটেল-মোটেলে ২০ জন পর্যটক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি হোটেল-মোটেল তৈরি করা হবে।

এছাড়া ৩ একর জমির উপর ফুল চাষের মাঠ, সেমিনার, কর্মশালা এবং সমাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মাল্টি-পারপাস সেন্টার, ২ দশমিক ৪৭ একর জমির ওপর শৈবাল (স্পিরিলুনা) চাষ, মুক্তা চাষ এবং কমিউনি টিট্যুরিজমের সুপারিশ করা হয়েছে। আর ৩০ একর জমরি উপর ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে  পর্যটনের নতুন সুযোগ তৈরি করবে। আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ হতে দেখা যায় যে, প্রকল্পটি আর্থিক এবং অর্থনৈতিক দিক হতে লাভজনক। সার্বিক দিক বিবেচনা করে, সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপে ইকোট্যুরিজমের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সোনাদিয়ায় ইকো ট্যুরিজমকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। তবে দ্বীপের শত বছরের জনবসতি বহাল রেখেই ইকো ট্যুরিজম বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

সোনাদিয়ার বাসিন্দা আমির খান বলেন,

কক্সবাজার শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরত্বে বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্হিত সাগরদ্বীপ সোনাদিয়া। অপরূপ বালিয়াড়ী, নিবিড় ঝাউবন, শুভ্র বালুকাময় সৈকত,  শুঁটকি পল্লী, লবন-চিংড়ি উৎপাদন, নারকেল বাগান, দ্বীপের মাঝে স্রোতস্বিনী নদীপথ ও প্যারাবনসমৃদ্ধ এ সোনাদিয়া দ্বীপ।

সেন্টমার্টিনের চেয়েও আকর্ষনীয় সোনাদিয়া  হতে পারে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট।

সোনাদিয়ার অপর বাসিন্দা শাহাব উদ্দীন বলেন,

পরিবেশবান্ধব হোটেল-রেস্তোঁরা-রাস্তাঘাট নির্মান ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে বিকল্প পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে সোনাদিয়াকে গড়ে তুলতে পারলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে এ দ্বীপ।

দ্বীপের অভ্যন্তরীন প্যারাবনে বিস্তৃত নদীপথে রয়েছে রিভার ক্রুজের সব সুযোগ-সুবিধা। কক্সবাজারের পর্যটন অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে সোনাদিয়া।

এখানে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা, প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের।

পাঠকের মতামত: