ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পানিশূন্য হচ্ছে পাহাড়ি ঝিরি নাব্যতা হারাচ্ছে মাতামুহুরী, আইন অমান্য করে পাথর আহরণ ও পাচারের অভিযোগ

লামা-আলীকদম প্রতিনিধি ::

লামা ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরি খুঁড়ে অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পাচার অব্যাহত আছে। বহিরাগত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় পাথর আহরণ ও পাচার করছে বলে জানা গেছে।

বিধি বহির্ভূতভাবে পাথর আহরণের বিরূপ প্রভাবে স্থানীয় পাহাড়ি ঝিরিগুলো শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে ও বর্ষায় পাহাড়ের মাটি ধসে মাতামুহুরী নদী দ্রুত নাব্যতা হারাচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা দুটির বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে আহরিত ৫ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর পাচারের জন্য মজুত রয়েছে।

সূত্র জানায়, অবকাঠামো উন্নয়নে পাথরের ব্যাপক চাহিদার সুযোগে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট লামা ও আলীকদম উপজেলার কিছু ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ধরনের অনুমতি কিংবা লিজ গ্রহণ ছাড়াই উপজেলা দুটির বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরি খুঁড়ে পাথর আহরণ ও পাচার করছে।

সাধারণত বৈধ পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর আহরণের ক্ষেত্রে খাল, ঝিরি ও নদী থেকে ভাসমান পাথর আহরণ ব্যতীত অন্য কোনো পাথর আহরণ করা যাবে না মর্মে বিধিনিষেধ রয়েছে। লেক বা ঝর্না হতে কোনো প্রকার পাথর উত্তোলন করা যাবে না। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনোরূপ পন্থা অবলম্বন করে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া পাথর উত্তোলনের এলাকার ঝিরিগুলো যাতে পানি শুকিয়ে না যায়, বিষয়টি খেয়াল রাখাসহ বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। পাথর আহরণকারীরা এসব বিধিনিষেধের কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরির মাটি খুঁড়ে পাথর অহরণ করে থাকে। বিধি বহির্ভূতভাবে পাথর আহরণের ফলে একদিকে যেমন স্থানীয় পাহাড়ি ঝিরিগুলো শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে এলাকায় পানির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে পাহাড় ও ঝিরির মাটি খুঁড়ে পাথর আহরণের ফলে খুঁড়ে ফেলা কিংবা ধসেপড়া পাহাড়ের মাটি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঝিরি বেয়ে মাতামুহুরী নদীতে পড়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। গত এক দশকে অস্বাভাাবিকভাবে মাতামুহুরী নদী নাব্যতা হারানোর জন্য পাথর অহরণকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি সূত্রগুলো জানিয়েছে, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাঁঠালছড়া, ইয়াংছা মেম্বারপাড়া, গুলির মাঠ, শামুকঝিরি, বদুরঝিরি, মিরিঞ্জা, বনপুর বাজার, ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রাপাড়া, খ্রিস্টানপাড়া, মরার ঝিরি, চচাইপাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারিপাড়া ঝিরি, জোয়াকিপাড়া, বাঁকখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি হতে নির্বিচারে পাথর তুলে মজুত করা হয়েছে। এ ছাড়া গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড, নিমন্দ্র মেম্বারপাড়া, মিনঝিরি, ফাইতং রাস্তার মাথা, আকিরামপাড়া, নাজিরামপাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের মিজঝিরি অংশ, লম্বাশিয়া, মেহুন্ধা খাল, শিবাতলী পাড়া এবং সরই ইউনিয়নের লুলাইং, লেমুপালং এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধভাবে আহরিত পাথর জমা করা হয়েছে।

অপরদিকে আলীকদম উপজেলার তৈন মৌজার ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠাণ্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির শাখা প্রশাখা, আলীকদম-থানচি সড়ক, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া সড়কের পথে পথে পাথরের স্তূপ, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ভরিখাল, কলারঝিরির শাখা প্রশাখা, রেপারপাড়া এলাকার ডপ্রু ঝিরি, চিনারি দোকান এলাকার ভরিমুখ, মমপাখই হেডম্যানপাড়া, বাঘেরঝিরি এলাকা থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই নির্বিচারে পাথর আহরণ ও পাচার করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এ ছাড়া আলীকদম মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর থেকেও অবৈধভাবে পাথর আহরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। সরকারি অনুমতি ছাড়াই নির্বিচারে পাথর আহরণ করে এসব এলাকায় ৫ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর পাচারের অপেক্ষায় মজুত রয়েছে বলে জানা গেছে।

অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পাচারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত সিদ্দিকা বলেন, ‘শিগগিরই অবৈধভাবে পাথর আহরণ, মজুত ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

লামা ও আলীকদম থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ত্বরিত কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত: