বাংলা ট্রিবিউন গত বছরের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’নিহত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ হয়নি আজও। নিহতের এক বছর পরও হয়নি ঘটনার তদন্ত। সেই আক্ষেপ আর হতাশা ঝরে পড়েছে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগমের কণ্ঠে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেছেন, ‘আমি আজীবন আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাইবো।’
শনিবার (২৫ মে) বিকালে মুঠোফোনে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে তার কথা হয়। তিনি বলেন ‘আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। কোথায় গেলে, কী করলে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারবো? আমি এখনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার স্বপ্ন দেখি। আমি বিশ্বাস করি কোনও এক সময় মোবাইল ফোনে আমাকে ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী। তখন আমি আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সব কিছু বোঝাতে সক্ষম হবো। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করবো। আমার বিশ্বাস, বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে স্বামী হত্যার সঠিক বিচার পাবো। আমি আজীবন আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাইবো।’
‘চল যাই যুদ্ধে-মাদকের বিরুদ্ধে’এই স্লোগানে মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা চোরাকারবারের অভিযোগে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একরামুল হক। তিনি টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালি পাড়ার আবদুস সাত্তারের ছেলে এবং পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি। ওই সময় সারাদেশে অন্তত এক শ মাদক চোরাকারবারি নিহত হয় এবং সে ব্যাপারে কেউ মুখ খোলেনি। কিন্তু একরামুল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের একটি অডিও রেকর্ড সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। শুরু থেকেই ওই জনপ্রতিনিধির স্বজনরা দাবি করে আসছেন, ‘নির্দোষ’একরামকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’করা হয়েছে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে অনেকেই নিহত একরাম হকের বাড়িতে গিয়ে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন পরিবারকে। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরেও সে আশ্বাসের কিছুই পূরণ হয়নি।
বাবাকে নিয়ে মনের অব্যক্ত কথা প্রকাশমুঠোফোনে স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমাদের শেষ ইচ্ছে ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একরামের বিষয়টি সরাসরি বুঝিয়ে বলবো। এতে করে বাবাহারা দুই মেয়ে অন্তত শান্তি পাবে। কিন্তু এর কোনও কিছু হয়নি। বাবাহারা দুই মেয়ের চাপা কান্না আমার আর সহ্য হয় না।’ তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার করবে সরকার। তদন্ত করে দেখা হবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি। কিন্তু গত এক বছর পার হলেও কিছুই হয়নি।’
নিহত একরামের স্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার বাড়িতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী মো. রিয়াজুল হক এসেছিলেন, আমাদের অবস্থা দেখে গেছেন। পুরো বিষয়টি তারা দেখছেন এবং অবশ্যই বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে হত্যার বিচার হবে -এই বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কোনও কিছু হয়নি। এখন দেখছি সবকিছুই ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে। আমাদের খবর কেউ রাখেনি।’
বাবা এখন শুধুই স্মৃতি। ছবিতেই বাবাকে হয়তো খুজেঁ পেতে চায় মেয়েতিনি মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা অথবা একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলাম। আমার পরিবারের সবাইকে কোনও প্রকার মামলা করতে দেয়নি একটি মহল। আমাকে বলছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মামলা করতে। কিন্তু এই পর্যন্ত কোনও মামলা তো দূরের কথা, একটু তদন্তও হয়নি।’
আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমাকে কোনও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে চাপ দেওয়া হয়েছিল।’ তবে কারা চাপ সৃষ্টি করেছে সে ব্যাপারে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়ে দুটির দিকে থাকিয়ে এখনও টেকনাফে অবস্থান করছি এবং মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি আমার দুই মেয়েকে পড়ালেখা করাতে চাই। এখনও তারা বিজিবি স্কুলে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ কোনও ফি ছাড়াই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।’
একরাম মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল না দাবি করে আয়েশা বেগম বলেন, ‘একটি বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু কেউ আমার মেয়েদের খবর নেয়নি। অনেকে আশার বাণী দিয়েছিল কিন্তু তা শুধু নিষ্ফল। গত বছর রমজানে দুই মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাকে দেখা করিয়ে দেবেন। কিন্তু এই বছরের রমজান শেষের পথে, কোনও ডাক পাইনি। সে সময় স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু উপর থেকে নির্দেশ আসে এই ব্যাপারে কোনও কিছু করা যাবে না। বিষয়টি সরকার দেখছে।’
আয়েশা বলেন, ‘একটি পক্ষের সঙ্গে মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করা হলেও সরকার চুপ করে থাকলো- এটি কেমন করে মানা যায়। অতন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি মানা যায় না। কারণ আমার স্বামী তো আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগী নেতা ছিলেন।’তিনি বলেন, ‘একরামের স্ত্রী নই, দেশের নাগরিক হিসেবে জানতে চাই- কেন আমার স্বামী খুন হলো? কেউ আমার দুই মেয়ের খবর রাখেনি। জানি না এটি কেমন সমাজ! এখন আমার খুবই কষ্টের জীবন চলছে। একদিকে স্বামী হত্যার বিচার কবে পাবো অন্যদিকে মেয়েদের কান্না আর কতদিন শুনতে হবে প্রতিদিন রাতে।’
বাবার কথা মনে পড়লেই কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই মেয়েতিনি বলেন, মেয়েরা সেহরি খাওয়ার সময় এখনও বাবাকে খোঁজে, কান্না করে। তারা জানতে চায়- মা, বাবা তো কোনও দিন কোনও মানুষের খারাপ কিছু করেনি, চায়নি। তবুও কেন বাবাকে এভাবে খুন করা হয়েছে। যখন এমন প্রশ্ন করে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। আমার মতে, ‘ইয়াবার কারণে এ ঘটনা ঘটেনি- এটি নাটকীয় ও ষড়যন্ত্রমূলক একটি হত্যাকাণ্ড।’
তিনি বলেন, আমি একটিবার মাত্র প্রধানন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। কারণ উনি নারী, আমিও একজন নারী। ফলে আমার কষ্টের কথাগুলো বুঝবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে স্বামী হত্যার বিচার পাবো।
একরামুল হক নিহতের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি তেমন অবগত নই। কারণ আমি সেই সময় কক্সবাজারে ছিলাম না। তবে যতটুকু জানি এ ব্যাপারে একরামের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনও মামলা করেননি। র্যাবের পক্ষ থেকে যে মামলাগুলো করা হয়েছে সম্ভবত সেগুলো চলমান রয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ মে রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে একরামুল হক র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তার ছয়দিন পর কক্সবাজার প্রেসক্লাবে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম সংবাদ সম্মেলন করার পর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। স্বামীর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেন তিনি। এতে ‘বন্দুকযুদ্ধের’যে বর্ণনা দিয়েছিল র্যাব- তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ গুলির শব্দে একরামুলের নিহত হওয়া এবং তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্নার মর্মান্তিক অডিও রেকর্ডটি নাড়া দেয় মানুষের মনে।
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হকসহ র্যাব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন একরামের পরিবারকে। কিন্তু সে আশ্বাস পূরণ হয়নি আজও।
প্রকাশ:
২০১৯-০৫-২৬ ০৬:৪৪:২৮
আপডেট:২০১৯-০৫-২৬ ০৬:৪৪:২৮
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি জীপ গাড়ি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষে আরোহী যুবক নিহত
- সেলিম-শফির খুনীদের এলাকায় ডুকতে দেয়া হবে না
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- অবৈধ গাছ পাচারে মাসিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় রেঞ্জ কর্মকর্তার
- কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সংকট না থাকার আভাস : মিলছে চাহিদার পুরো ২০০ মেগাওয়াটই
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- অবৈধ গাছ পাচারে মাসিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় রেঞ্জ কর্মকর্তার
- রুমা-থানচির ব্যাংক ডাকাতি: ১৮ নারীসহ ৫৬ জন কেএনএফ সদস্য গ্রেফতার, অস্ত্রসহ মাস্টারমাইন্ড ও সরঞ্জাম উদ্ধার
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
পাঠকের মতামত: