ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ‍‍‌”শান্তির মা” মরে গেছে….

:: এম.আর মাহমুদ ::
বেশ ক’মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সম্পর্ক নেই-ই বলা চলে। তবে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি তা নয়। নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার মধ্যে আলোচিত অনেক বিষয় থাকলেও লেখালেখি করা সম্ভব হয়নি। লিখে লাভও নাই তেমন। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব লেখার কারণে অনেকের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। বিচিত্র এক দেশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন পাহাড়ের দিকে তাকাই, তখন হরেক বন্যপ্রাণির শোর-চিৎকার শুনি আর সমুদ্রের দিকে যখন তাকাই, তখন সমুদ্রের গর্জনই শুনি। কক্সবাজারের সম্পদ ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চকরিয়ার মানুষ শান্তিতে নাই। শান্তিতে থাকার কোন যুক্তিও নেই। সম্প্রতি শান্তির মা নৌকায় ডুবে মারা গেছে। চকরিয়ার মানুষ বড়ই কর্মঠ। তারা করে ধরে খায়, কারও দ্বারে নাই। প্রচুর বোরো ধান, লবণ উৎপাদন করেছে। কিন্তু ন্যায্য মূল্য চাষিরা পাচ্ছে না। এক মণ ধান ও আড়াই মণ লবণ বিক্রি করে পবিত্র রমজান মাসে এক কেজি গরুর গোশ্ত ক্রয় করে পরিবার পরিজন নিয়ে মধ্য রাতে সেহেরী খেতে পারছে না। এরই নাম কপাল। অপরদিকে চকরিয়ার উপকূলের চিংড়ি জোন হিসেবে খ্যাত রামপুর মৌজায় সরকার কর্তৃক বৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া ১০ ও ১১ একর বিশিষ্ট চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষিরা শান্তিতে নেই। ইদানিং প্রতি রাতেই কোদাইল্যা বাহিনী নামক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ঘের এলাকায় রাতের আঁধারে তান্ডব চালিয়ে ঘেরের মাছ, মালামাল লুটপাট করছে কর্মচারীদের নির্দয়ভাবে পিঠাচ্ছে। চিংড়ি জোন এলাকা রামপুর যেন সন্ধ্যার পর ডাকাতের গ্রামে পরিণত হয়। বৈধভাবে বরাদ্দ প্রাপ্ত ঘের মালিকেরা শংকিত অবস্থায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে বৈধ ঘের মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, ইতিমধ্যে কথিত কোদাইল্যা বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২ হাজার একর চিংড়ি ঘের দখল করে রেখেছে। তবে চকরিয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘের এলাকায় সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালায় রাতের আঁধারে। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন অভিযান চালায় দিনে। দু’পক্ষেরই পরস্পর বিপরীতমুখী অভিযানের কারণে বৈধ ঘের মালিকেরা সুফল পাচ্ছে না। তবে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের উল্লাস নৃত্য কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে কোদাইল্যা বাহিনীর সদস্যরা কারা? তাদের কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন চিনে না? আর চিনলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্ন করেছেন, ঘের মালিক সমিতির নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুছা। চকরিয়ার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও চিংড়ি ঘের এলাকায় দুর্বৃত্তদের নৈরাজ্যের কারণে এক সময় ঘের এলাকার চিংড়ি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়বে। মূলতঃ কোন না কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লালিত পালিত সন্ত্রাসীরাই চিংড়িঘের এলাকায় দখল বেদখল লুটপাতের ঘটনায় ঘটিয়ে যাচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে একজন প্রবীণ চিংড়ি চাষী মন্তব্য করতে শোনা গেছে, “মাতবরের পায়ে কাঁদা, মাছ চুরির বিচার দিব কারে?” এ উক্তিটির ব্যাখ্যা তিনি দিতে রাজি নয়। ইদানিং চরণদ্বীপ, রামপুর, ও বদরখালী এলাকায় উপকূলীয় প্যারাবন উজাড়ের উৎসব চলছে। উপকূলীয় বনবিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও দখল, প্যারাবন উজাড় ঠেকাতে পারছে না। অথচ ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হলে পুরো উপকূল বিরানভূমিতে পরিণত হবে। উপকূলে সবুজ বেষ্টনী তথা প্যারাবন থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব অনেকটা কম হয়। এটা জানার পরও আমাদের জনপ্রতিনিধিরা প্যারাবন উজাড়ে অর্থপূর্ণ উদারতা প্রদর্শন করে যাচ্ছে। যার মাশুল দিতে হবে আমাদের আগামীর প্রজন্মকে।

পাঠকের মতামত: