ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রামুতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার অনুষ্ঠান শুরু

নীতিশ বড়ুয়া, রামু ::

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা আজ শনিবার। এ উপলক্ষে কক্সবাজারের রামুতে ২৭ টি বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও মহাপরিনির্বাণ লাভের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িতি এ দিনটি পালন হচ্ছে । গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে বিহারে বিহারে বিভিন্ন কর্মসূচী শুরু হয়েছে। বিহারগুলোকে আলোক সজ্জায় সজ্জিত করন করা হয়েছে। বুদ্ধপূর্ণিমাকে ঘিরে বৌদ্ধ বিহার ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলা চালানোর হুমকির বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে একটু ভয়-ভীতির সঞ্চার হলে প্রশাসনের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ও তদারকিতে বৌদ্ধদের ভয়-ভীতি অনেক কেটে উঠেছে।

শুক্রবার (১৭ মে) কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার ও রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি জানান, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। জঙ্গী হামলাসহ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলার প্রায় ১৪৫টি বৌদ্ধ বিহারে ৬৫০জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বিহার ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে। প্রতিটি বিহারের সাথেই যেকোনো প্রয়োজনে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈশাখী পূর্ণিমার অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রতিটি বিহারে পুলিশ, আনসার, কমিউনিটি পুলিশ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সমন্বয়ে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুদ্ধ পুর্ণিমারদিন বিহার ও অনুষ্ঠানস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলা হবে। গতকাল শুক্রবার থেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিহারে বিহারে কাজ শুরু করেছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার,র‌র‌্যাব এবং সাদা পোষাকেও আইন শৃংখল বাহিনীর লোকজন দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ২০১২ সালের রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতি হামলার ঘটনার পর থেকে সেখানকার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়। তাই রামুর ২৭টি বৌদ্ধ বিহারে আরো বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং নজরদাড়ি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে মহামতি বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত এদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যদান, শান্তি শোভাযাত্রা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোকসজ্জ্বা, ধর্ম দেশনা শ্রবণ, বাংলাদেশসহ বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার আয়োজন রাখা করা হয়েছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ পুরাকীর্তির শহর খ্যাত স¤্রাট অশোক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামুর ঐতিহাসিক রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার, রামু মৈত্রী বিহার, রামু উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও ভূবন শান্তি একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তিসহ উপজেলার ২৭টি বৌদ্ধ বিহারে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) বিকালে বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধতীর্থস্থান রামু রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনকালে এ প্রতিবেদককে বিহার অধ্যক্ষ কে শ্রী জ্যোতিসেন থের জানান, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও পবিত্র তীর্থস্থান রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে হাজার হাজার পূর্ণ্যার্থীর সমাগম হচ্ছে। তাই আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিহারে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এবছরও গৃহিত কর্মসূচীর মধ্যে বিকাল ৩টায় ১০১ জন কুলপুত্রকে প্রব্রজ্যাদান, সন্ধ্যা ৭ টায় হাজার প্রদীপ পজ্জলন, রাত ১০টায় বৌদ্ধ ধর্মীয় কীর্তণ, রাত ১২টা ১মিনিটে পূজা সাজানো এবং শনিবার ভোর ৪টা ০১ মিনিট থেকে বুদ্ধপূজা উত্তোলন, ৫টা ৩০ মিনিটে বুদ্ধপুজা উৎসর্গ ও পূণ্যানুমোদন, সকাল সাড়ে ৯টায় প্রয়াত বৌদ্ধ ভিক্ষু সারমেধ, প্রজ্ঞালোক, জগৎচন্দ্র, প্রজ্ঞাজ্যোতি ও চন্দ্রজ্যোতি মহাথেরগণের স্মরণে মহাসংঘদান এবং ১২ টায় অতিথি ভোজন অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ প্রত্যেকটি বৌদ্ধ বিহারে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনে গত কয়েকদিন থেকে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল মনসুর এবং ওসি তদন্ত মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় মুরুব্বি ও যুবসমাজকে নিয়ে মতবিনিময় সভা ও প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছেন। অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল মনসুর জানান, বৌদ্ধদের শুভ বুদ্ধপূর্ণিমায় দিন ব্যাপী কর্মসূচী নির্ভিঘেœ পালনে পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় থাকবে। এছাড়া বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ব্যাটালিয়নের নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও জোরদার থাকবে।

পাঠকের মতামত: