ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার চিংড়িজোনে ‘জোঁ’র সাথে সন্ত্রাসী তাণ্ডব

চকরিয়া প্রতিনিধি ::  কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোনে জোঁ (মাছ ধরার মৌসুম) শুরু হওয়ার আগেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতার পালাবদল ও থানার ওসির বদলির সুযোগে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পুরো চিংড়িজোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার ২ ও ৩ নম্বরসহ বিভিন্ন পোল্ডারের ১০ ও ১১ একর বিশিষ্ট ৪৪৮টি ও ১১ একর বিশিষ্ট ১১৯টি চিংড়িঘেরে হানা দিয়ে সশস্ত্র তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় কয়েকটি ঘেরের চারজন কর্মচারীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়ে তারা ক্ষান্ত হননি, বর্তমানে উপরোক্ত ঘেরের প্রায় সাত হাজার একর চিংড়িজমির মধ্যে অন্তত ২ হাজার একর চিংড়িজমি জবর-দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ধরনের প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের বৈধ লিজপ্রাপ্ত চিংড়ি চাষিদের পক্ষ থেকে।
গত বুধবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুছা বাদী হয়ে মিজানুর রহমান ও ফোরকান ডাকাতসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো ২৫-৩০ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, গত ১১ মে বিকেল তিনটার পর থেকে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার ২ ও ৩ নম্বর পোল্ডারের ১০ একর বিশিষ্ট ৯৮টি চিংড়িপ্রকল্পে হানা দেয়। এ সময় তারা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় এসব ঘেরে নিয়োজিত কর্মচারীরা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। কিন্তু পাঁচজন কর্মচারীকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করে।
তারা হলেন, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনার মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে নাজেম উদ্দিন (৪৯), সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল আলম (৩০), মাইজঘোনা এলাকার জাফর আহমদের ছেলে মো. দুলাল (৪০), কোরালখালীর আকবর আহমদের ছেলে মোহাম্মদ বাবু (২৮) ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িপুকুর গ্রামের মোজাহের আহমদের ছেলে মো. জামাল (৪০)।
থানায় দেওয়া অভিযোগে আরো জানানো হয়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কর্মচারীদের পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখার পর পলবোটের দরজা খুলে দিয়ে চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার ২ ও ৩ নম্বর পোল্ডারের ১০ একর বিশিষ্ট ৯৮টি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে প্রায় কোটি টাকার উৎপাদিত লবণ পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া ছাড়াও লুট করে ১০টি বিদেশি টর্চ লাইট, ৫ বস্তা চাল, ৩০টি বিহিঙ্গি জাল, ২৫টি ঝাঁকি জাল, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, খামার বাড়ির আসবাবপত্র ও প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় ছাগল। এ সময় পেট্রল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এসব ঘেরের খামার বাড়িগুলো। কয়েকদিন আগে সংঘটিত এসব ঘটনায় মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে বৈধভাবে লিজপ্রাপ্ত চিংড়িচাষিদের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুছা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত এজাহার জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুছা জানান, চলতি মৌসুমের মাছ ধরার জোঁ শুরু হওয়ার আগেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এমন অপতৎপরতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এতদিন চিংড়িজোন অনেকটা শান্ত থাকলেও নতুন করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতার কারণে চিংড়ি চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার নতুন ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই থানায় সবেমাত্র যোগদান করেছি। তাই চিংড়িজোনের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে মো. মুছা নামের এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবশ্যই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: