ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবার নিয়ন্ত্রণে টেকনাফের কতিপয় সাংবাদিক!

পরিবর্তন ডটকম ::
মাদক-বিরোধী অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বর্তমানে আত্মগোপনে। এই সুযোগে ইয়াবার ‘রাজধানী’ টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সাংবাদিকদের একটি সিন্ডিকেট।

সাংবাদিকতার সাইন বোর্ড ব্যবহার করে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর স্বজন ও পার্টনাররা ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

গত কয়েকদিনে টেকনাফে পুলিশের হাতে দুই সাংবাদিকসহ একাধিক ইয়াবা পাচারকারী আটক হওয়ার পর বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকার এসব তথ্য।

এবার এই সাংবাদিক সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা।

টেকনাফ থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে দেশের ইয়াবা কিং সাইফুল করিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দুই ভাই রাশেদুল করিম ও মাহবুবুল করিমকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করা হয়।

এসময় রাশেদুল করিম নিজেকে টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করে পুলিশের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। পরে পুলিশ জানতে পারে সাইফুল করিমের এই দুই ভাই টেকনাফ বার্তা ২৪ নামের একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুই সাংবাদিক তাদের ইয়াবা ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন।

এর একদিন পরে গত ৪ মে ইয়াবা কিং সাইফুল করিমের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ নূরকে আটকের পর বের হয়ে আসে আরো অনেক গোপন তথ্য।

মোহাম্মদ নূর পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সাইফুল করিম আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকে তার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে সাইফুলের ভগ্নিপতি টেকনাফ পৌর প্রেসক্লাবের সভাপতি, দৈনিক আমাদের সময়ের টেকনাফ প্রতিনিধি ও পৌর কাউন্সিলার আবদুল্লাহ মনির।

মনিরের সহযোগিতায় রয়েছে টেকনাফের দুই সংবাদিক রাশেদুল করিম ও মাহাবুবুল করিমসহ টেকনাফের কর্মরত আরো ৪ সাংবাদিক।

আটক মোহাম্মদ নূরের আদালতে জবানবন্দির তথ্যে নড়েচড়ে বসেছে টেকনাফের প্রশাসন। টেকনাফে যারা এতদিন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে মাদক-বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে তারাই আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে! তাদের কেউ কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা বা শীর্ষ জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত।

এই সিন্ডিকেটটি টেকনাফের দুটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্বেও রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে ১০২ জন ইয়াবা গডফাদারের আত্মসমর্পণের সময়ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাংবাদিকদের ব্যাপারে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া গেছে।

সেই সময় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তথ্য দিয়েছে টেকনাফের দুটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক মিলে টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিচ্ছে।

টেকনাফ থানার উত্তর পাশে একটি অফিস করে মনির ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

আত্মসমর্পণকারীরা পুলিশকে জানিয়েছে, কিছু দিন আগেও টেকনাফ পৌর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কাউন্সিলার আব্দুল্লাহ মনিরের কাছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আড়াই কোটি টাকা জামা দিয়েছে।

এই লেনদেনের ঘটনা কক্সবাজারের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও তার ভাই অবগত আছেন।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন, টেকনাফের সাংবাদিকদের একটি সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে।

ওসি জানান, আটক ইয়াবা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টেকনাফের ইয়াবা কিং সাইফুল করিমের একমাত্র ভগ্নিপতি টেকনাফ পৌর প্রেস ক্লাবের টেকনাফের সভাপতি টেকনাফ পৌসভার কাউন্সিলার আবদুল্লাহ মনির ও কয়েকজন সাংবাদিক মিলে এখন সাইফুল করিমের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন পিপিএম পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক আবদুল্লাহ মনিরসহ কয়েকজনের ব্যাপারে কিছু তথ্য দিয়েছিলো। যে সাংবাদিকের নাম আত্মসর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বলেছে তাদের অনেকের নাম বিভিন্ন সংস্থার ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় রয়েছে। তারা মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী।

এসপি জানান, সাংবাদিকতা পেশাকে তারা ইয়াবা ব্যবসার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যে সব সাংবাদিকের ব্যাপারে ইয়াবা ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদের নজরদাড়ি করা হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: