ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফণীর প্রভাবে কুতুবদিয়া উপকূলের ২০ গ্রাম প্লাবিত, শত কোটি টাকার লবণ ও পাঁকা ধানের ফসল নষ্ট

আবু আব্বাস সিদ্দিকী কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) ::
ঘূর্ণিঝড় ফণীর ফনার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কক্সবাজারের উপকূল কুতুবদিয়া দ্বীপে শুক্রবার সকাল ১১টায় জোয়ারে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ইউএনও দীপক কুমার রায় চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্লাবিত এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে শুকঁনো খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও আরো জানান, আজ শুক্রবার সকালে উপজেলা প্রশাসন বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে মাইকিং করে নিবাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর চকরিয়া নিউজকে বলেন, পূর্বে থেকে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক থাকায় যানের তেমন ক্ষতি হয়নি মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা চকরিয়া নিউজকে জানান, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর,আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, কাহারপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়াও বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম চকরিয়া নিউজকে জানান, দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজাখালী,আজম কলোনী, কৈয়ারবিল ইউপির চেয়ারম্যান জালাল আহমদ জানান, মলমচর,উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলার পাড়া,দক্ষিণ ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধূরী জানান, বাতিঘর পাড়া, উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ,স,ম শাহরিয়ার চৌধূরী জানান, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, ফয়জানিরবাপের পাড়া, পূর্ব নয়াকাটা, উত্তর সতর উদ্দিন, লেমশীখালী ইউপির চেয়ারম্যান আলহাজ আকতার হোছাইন জানান, পেয়ারাকাটা, ক্রসডেম বিসিক এলাকায় জোয়ারের নোনা পানি ডুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পশ্চিম তাবলরচর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লুৎফরন্নেছা (৫৬) জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর অমাবশ্যার জেয়ারের প্রভাবে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ চকরিয়া নিউজকে জানান, দুই শতাধিক ঘরবাড়ি,শত শত একর পাকাঁ ধানের ফসল প্লাবিত এবং শত শত একর লবণ চাষের কয়েক হাজার মেট্রিকটন লবণ তলিয়ে গেছে। এতে সাধারণ কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
কৃষকলীগ কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব আলম সিকদার বলেন, বৈশাখে পুকুর ,মাঠ,খাল বিল ফেটে চৌঁচির হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ফণীর প্রভাবে কুতুবদিয়া দ্বীপে জোয়ারে নোনা জলে লোকালয় তলিয়ে গেছে। নোনা জলে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে বায়ুবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে জনবসতির ছেয়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র তুলনামুলক কম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে মানুষের দূর্ভোগ চোখে পড়ার মতো।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধূরী বলেন, কুতুবদিয়া উপকূলের কৃষকেরা বুঝতে পারেনি এভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে চলে আসবে। জোয়ারের প্রভাবে উপকূলের কৃষক ও লবণচাষীদের কোটি কোটি টাকার ফসল ও লবণ নষ্ট হয়েছে। দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁেধর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান চকরিয়া নিউজকে বলেন, পূর্বে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাধ ভাঙ্গা ছিল। বিগত দুই বছর পূর্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় একশ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও যথাসময়ে কাজ করেনি। তবে বেশী ভাঙন এলাকায় জোয়ার রক্ষার জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে জোয়ার ঠেকানোর জন্য কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পশ্চিম তাবলরচর এলাকা ভাঙন বাঁেধ জরুরী ভিত্তিকে জোয়ার ঠেকানোর জন্য মাটি দিলেও তা ঘূর্নিঝড় ফণী ও অমাবশ্যার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তা তলিয়ে গেছে।

পাঠকের মতামত: