ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিদেশে পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, মূলহোতা রোহিঙ্গা নেতা ঢাকায় গ্রেফতার

শফিক আজাদ, উখিয়া ::
দেশে নয়, বিদেশেও পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী। এক শ্রেণীর অসাধূ চক্র ক্যাম্প ভিত্তিক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সুন্দরী যুবতি নারীদের দেশে এবং বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকট থাকলেও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় সহজে পাচারকারী চক্রকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে বলে সুত্রে জানা গেছে। তবে শুক্রবার ঢাকা বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ পাচারকারী চক্রের মুলহোতা কুতুপালং ডি-৪ বক্লের বাসিন্দা মৌলানা শামসুল আলম (৫১)কে গ্রেফতার করেছে। সে ভূয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে যাওয়া আসা করতো।
সুত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এক শ্রেণীর পেশাদার পাচারকারী চক্র বিভিন্ন প্রলোভনসহ তাদের যুবতি মেয়েদের মাসিক বেতনের চাকরির কথা বলে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে। বিদেশ নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে গুটি কয়েক রোহিঙ্গা নারী দালাল গ্রেফতার হলেও বেশির ভাগ নারীদের বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট। তৎমধ্যে শামসুল আলম অন্যতম।
গত ৩দিন আগে ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে শরীয়তপুরে পাসপোর্ট করতে এসে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে রোহিঙ্গা মা ও মেয়ে। এরা হলেন- মিয়ানমারের মৃত-সাব্বিরি আহম্মেদের স্ত্রী নুরহাবা (৫৫) ও তার মেয়ে খালেদা আক্তার (১৯)। আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে চট্রগ্রামের হাটহাজারি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে বলে জানা যায়। শরীয়তপুর পাসপোর্ট অফিস ও পালং মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রোহিঙ্গা খালেদা আকতার শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্র্রপুর ইউনিয়নের কীর্তিনগর এলাকার ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান। পাসপোর্টে তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তিনগর বাসিন্দা নুরে আলমের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন খালেদা আক্তার। পাসপোর্ট জমা দেয়ার সময় শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসার আবেদনকারীকে ডেকে কথা বলতে গিয়ে কথাবার্তায় রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ হয়।
এরপর তাকে বসিয়ে রেখে পালং থানার পুলিশকে খবর দেন তিনি। পুলিশ ঘটনাস্থাল গিয়ে তাকে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খালেদা নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করে নেয়। এবং তার বাড়ি মিয়ানমারে বলে জানায়। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে প্রায় ২০ বছর যাবৎ ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।
খালেদা পুলিশের কাছে আরো জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তনগর এলাকার সানোয়ারুল ইসলাম ও নুরে আলম নামে দুই দালাল পাচারের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে চটগ্রাম থেকে তাদেরক শরীয়তপুরে নিয়ে আসে। এ ঘটনার পরে অভিযুক্ত দুই দালাল সটকে পড়ে। এরপর তার সাথে আসা খালেদার মা নুরহাবাকে সোমবার রাতে আটক করে পালং মডেল থানা পুলিশ। বর্তমানে এই রোহিঙ্গা মা-মেয়ে পালং থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
রোহিঙ্গা খালেদা আক্তার বলেন, আমাদেরকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালাল সানোয়ারুল ইসলাম ও নুরে আলম হাটহাজারি ভাড়া বাসা থেকে শরীয়তপুরে পাসপোর্ট করতে নিয়ে আসে। আমাদের বাড়ি মিয়ানমার।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তনগর এলাকার সানোয়ারুল ইসলাম ও নুরে আলম নামে দুই দালাল মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে খালেদাকে পাসপোর্ট করার উদ্দেশ্যে শরীয়তপুরে নিয়ে আসে। তাদেরকে আটক করার পর তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা বলে স্বীকার করেছে। বর্তমানে তারা দু’জনই পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
সম্প্রতি (১৫ এপ্রিল) আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে গাজীপুরে পাসপোর্ট করতে গিয়ে আটক হয়েছে এক রোহিঙ্গা নারী। তার নাম ফারিয়া মীম (২৭)। মিয়ানমারের নাগরিক ফারিয়া মীম কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকে। তার বাবার নাম মঞ্জু শেখ ও মাতার নাম পারভীন বেগম।
গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো: কবির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গাজীপুর অফিসে এসে গত রোববার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ফারিয়া মীম। আবেদনপত্রে তিনি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের জয়নারায়ণপুর গ্রামের নাম উল্লেখ করেন। যাছাই বাছাইয়ের এক পর্যায়ে তার কথাবার্তা ও আচরণে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এসময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে একজন রোহিঙ্গা বলে দাবী করে। এছাড়াও সে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিল বলে স্বীকার করে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে খবর পেয়ে জিএমপি’র গাজীপুর সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফারিয়া মীমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এভাবে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বিদেশের প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গা যুবতি নারীদের পাচার করে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র। যদিওবা তারা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান, পাচারকারী চক্রটি ব্যাপারে আমরা কঠোর নজরদারী করে যাচ্ছি। অবশ্যই এই সিন্ডিকেটের কোন সদস্যকে চিহ্নিত করতে পারলে সে যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন ছাড় দেওয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত: