ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ওসি সবার কাছ থেকেই টাকা খেতেন

নিউজ ডেস্ক ::

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘নাটক’ ও পরে পুড়িয়ে হত্যাকে ‘আত্মহত্যায়’ রূপ দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিলেন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এসব ঘটনা ছাড়াও নানা অনিয়মের কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর পর থেকেই তার অনিয়ম দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

এক রিকশাচালকের অভিযোগ, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হইন্নি-পইন্নি কিছুই মানতো না, সবার থেকে টাকা খাইতো।’ জানা গেছে, শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওসি মোয়াজ্জেম নিজস্ব টোকেন বানিয়ে এবং বেআইনি লাইসেন্স দিয়ে তা রাস্তায় নামায়। এসব অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি একটি সমিতিও চালু করেনÑ ‘সোনাগাজী রিকশা শ্রমিক ও মালিক সমিতি’।

বর্তমানে সোনাগাজী শহরে ব্যাটারিচালিত প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ অটোরিকশা চলে। প্রতিটি রিকশাকেই প্রতিদিন এ সমিতিকে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। যার সিংহভাগই ঢুকতো ওসি মোয়াজ্জেমের পকেটে। পৌর মেয়র এ বিষয়ে আপত্তি তুললে ওসির সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্তরাও এতোদিন তা নীরবে সহ্য করেছেন।

দক্ষিণ চরচান্দিয়া গ্রামের রিকশাচালক মোশারফ হোসেন ও বিজয়নগরের মাঈনউদ্দিন জানান, নুসরাত হত্যায় বিতর্কিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রত্যাহার হলেও তার চাঁদাবাজির খড়গ থেকে রক্ষা পাননি অটোরিকশাচালকরা। তার সমিতিকে এখনো প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টাকা দিয়ে আগে ওসি মোয়াজ্জেমের টোকেন সংগ্রহ করতে হতো। সেটি যার কাছে থাকবে সেই কেবল প্রতিদিন ১০ টাকা হারে চাঁদা দিয়ে রিকশা চালাতে পারে। আর যার কাছে টোকেন নেই তাকে রিকশা চালাতেই দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে সোনাগাজী রিকশা শ্রমিক ও মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লাইনম্যান মো. মাসুদ বলেন, ‘অটোরিকশা থেকে যে টাকা তোলা হয় তা থানার ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে ওসির কাছে পৌঁছে যায়। কারণ আমরা কোনো নেতা নই। আমি শুধু টাকা তুলে দিই।’ সমিতির ক্যাশিয়ার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনাটি পেপার-পত্রিকায় লেখালেখি হলে আমাদের রিকশা চালানো বন্ধ করে দিবে। তখন না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা চাঁদা দিয়ে হলেও চাই রিকশা চালু থাকুক।’

তিনি আরও জানান, যিনি লাইনম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তাকে মাসে ৯ হাজার টাকা দিতে হয়। যে রেজিস্টার লেখেন তাকে দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পান মাসে দুই হাজার করে। আর ক্যাশিয়ার পান দেড় হাজার টাকা।

এ কমিটির সভাপতি লিটন ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ। এ ব্যাপারে সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘থানায় কোনো ক্যাশিয়ার নেই। চাঁদা তোলার বিষয়টি আমি জানি না।’ সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন আমাদের সময়কে বলেন, ‘১০ টাকা করে চাঁদা নেওয়ায় ওসি মোয়াজ্জেমের সঙ্গে আমার ঝামেলাও হয়েছে। আমি ব্যাটারিচালিত সব রিকশা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তিনি আবার চালু করেছেন।’

পাঠকের মতামত: