ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে কোটি টাকার খদিস নেই

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৭ এপ্রিল ॥  কক্সবাজারের রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার(পিআইও) অফিসে কোটি আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কাবিখাসহ শতাধিত প্রকল্পের এই টাকার কোন হদিস মিলছে না এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কোন অস্তিত্বও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশাল অংকের এই টাকার লোটপাটের ঘটনায় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা জড়িত রয়েছেন। তবে পিআইও অফিসের মাষ্টার রুল কর্মচারী নোমান এরশাদ এই বিশাল অংকের অর্থ সোনালী ব্যাংক রামু শাখার হতে নিজ নামীয় একাউন্ট থেকে বিভিন্ন কিস্তিতে উত্তোলণের মাধ্যমে লাপাত্তা ও আত্মসাৎ করেছে বলে দায় এড়াতে চাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও এঘটনায় জড়িত বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, প্রতি অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি এর নামে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন/ কাবিখা সহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোটা অংকের টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। গত অর্থ বছরে বরাদ্দের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের কুমানসে তৎকালিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জুবায়ের হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভুয়া প্রকল্প তৈরি কওে উক্ত প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ পিআইও অফিসে মাস্টার রুলে কর্মরত নোমান এরশাদ নামের এক কর্মচারীর রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক একাউন্টে সরিয়ে ফেলেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংক রামু শাখার (সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নং-০৯০৭৬০১০১৫১২০) থেকে এক কোটি টাকারও অর্থ বিভিন্ন কিস্তিতে উত্তোলণ করা হয়। এসব টাকার বিপরীতে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারী ব্যাংক একাউন্ট থাকতে মাষ্টারোল কর্মচারী একাউন্টে টাকা জমা দান ও উত্তোলনের আসল রহস্য কি? এই টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় করা হয়েছে এবিষয়ে কারো কাছে কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

রামু পিআইও অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরে মাষ্টারোল কর্মচারী এই নোমান এরশাদকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে রামু অফিসের পিআইও জুবায়ের হাসান বদলি হয়ে বর্তমানে কুমিল্লায় কর্মরত আছেন। সর্বশেষ রামু শাখা সোনালী ব্যাংক শাখা হতে গত ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে উক্ত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করার ৮৭ লাখ ৯ হাজার ৯৮১ টাকা। এসব টাকা উত্তোলন করার তথ্য রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। এঘটনায় রামু সোনালী ব্যাংক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা গেছে।

এদিকে, এই বিষয়ে রামুর তৎকালিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জুবায়ের হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনো নোমান এরশাদকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কেমন সমাধান করা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোন সদউত্তর দিতে পারেনি।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন, রামু পিআইও অফিসের মাষ্টারোল কর্মচারী নোমান এরশাদ বর্তমানে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিওতে কাজ করছেন।

অপর দিকে, রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুর রহমানের সাথে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে নোমান এরশাদের নামে সোনালী ব্যাংক রামু শাখার একাউন্ট নাম্বারটি দেখে পরে জানাবেন বলেন। পরে একাধিক বার রিং করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় আর কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেনা বলে জানান। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

—————————

পাঠকের মতামত: