ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে ১৭ পাহাড়ে চিহ্নিত হলো ৮৩৫ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ২৮ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড়েই’ বসবাস করছে ৮৩৫ পরিবার। পরিবারগুলোর বসবাস অবৈধ স্থাপনায়। নতুন করে প্রণয়ন করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি তালিকায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। ১৭ পাহাড়ের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করছে ৫৩১ পরিবার।

তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ৭ পাহাড়ে বাস করছে ৩০৪ পরিবার। আগামী বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকানোর অংশ হিসেবে পাহাড়ের ওপর অবৈধভাবে বসতি গড়ে তোলা এসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করল প্রশাসন। তালিকাটি প্রণয়নের আগে নগরীর কাট্টলি, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) এ সংক্রান্তে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় গত মার্চে। ‘পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের হালনাগাদ তালিকা’ শিরোনামে এ চিঠি দেয়া হয় জেলা প্রশাসন অফিস থেকে।

তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করতে গত ৩ মার্চ জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি যায় নগরীর সদর, কাট্টলি, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে। পরে ছয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের নাম ও মালিকানা, অবৈধ বসবাসকারীর নাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যা উল্লেখ একটি হালনাগাদ তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। ওই তালিকায় অবৈধ স্থাপনার বিবরণ এবং অবৈধভাবে ভাড়া প্রদানকারীর নাম ও ঠিকানাও রয়েছে।

হালনাগাদ তালিকা মতে, রেলওয়ের লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২২ পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ ১ নাম্বার ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২৮ পরিবার এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিনাকানাধীন কৈবল্যধামস্থ বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে আছে ২৮টি পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে আছে ১০ পরিবার, রেলওয়ে, সড়ক-যোগাযোগ বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ১৬২ পরিবার, ব্যাক্তি মালিকানাধীন একে খান এন্ড কোম্পানি পাহাড়ে আছে ২৬ পরিবার, হারুন খান এর পাহাড়ে আছে ৩৩ পরিবার, খাস খতিয়ানভুক্ত পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৪৩ পরিবার, মধুশাহ্‌ পাহাড়ে আছে ৩৪ পরিবার, ফয়েজলেক আ/এ সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৯ পরিবার, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৩৩ পরিবার, ভিপি সম্পত্তি লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ১১ পরিবার, এম আর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৮ পরিবার, মিয়ার পাহাড়ে ৩২ পরিবার, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১ পরিবার, আামিন কলোনি সংলগ্ন ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬ পরিবার ও আকবরশাহ্‌ আ/এ সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২৮ পরিবার। সব মিলে উল্লেখিত ৮৩৫ পরিবারই প্রশাসনের মাথা ব্যাথার কারন।

পাহাড়ের আশপাশের স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় কিংবা পাহাড়ের পাদদেশ কেটে-সমতল করে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে আসার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পাহাড়ের মালিকরা থাকেন নীরব। বরং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করা হয় বলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান চৌধুরীর দেয়া এক তদন্তে উঠে এসেছিল। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও কিছুদিন পর তারা আবারো ফিরে আসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া হিসেবেই পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে অবৈধ বসতকারীরা। এসব বসতির মালিকরা বরাবরই থেকে যায় আঁড়ালে। ফলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে।

এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন চকরিয়া নিউজকে জানান, গত এবারের বর্ষাকে সামনে রেখে কঠোর ও গোছানো পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কাজের সুবিধার্থে এ সংক্রান্ত সভায় এবার যুক্ত করা হয়েছে ইউএনও, র‌্যাব, বিজিবিসহ সরকারি বেসরকারি ৭০ ব্যক্তি ও সংস্থাকে। তিনি আরো জানান, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে যেন আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে এ পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দুর্যোগকালীন সময়কে বিবেচনায় রেখে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু পাহাড়গুলোর মালিকদের কি কোনো ভূমিকা নেই? পাহাড় ধসের দায় কি তাদের নেই। প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টায় নগরের সার্কিট হাউসে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এবারের সভায় নতুন করে ৫০ ব্যক্তি ও সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের করা এর আগের তালিকায় মহানগর ও আশপাশের এলাকায় সরকারি বেসরকারি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬৮৪ পরিবার বাস করার কথা বলা হয়েছিল।

পাহাড় ধংসে প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী উল্লেখ করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান চৌধুরীর দাখিল করা প্রতিবেদনে বিরাজমান সুষ্ঠু আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে যে কোন মূল্যে পাহাড় কাটা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস, পাহাড় কর্তন ও করণীয় সম্পর্কে রূপরেখা সম্বলিত ৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া পাহাড় ধসের মহাবিপর্যয় ঠেকাতে প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশও করা হয়েছিল।

পাঠকের মতামত: